হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাজশাহীতে সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের তৃতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন -যাযাদি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ, দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। তাই পেশাদারিত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য তাদের দক্ষ, সৎ ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য তাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে তারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন বলে তিনি আশা করেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীতে সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের তৃতীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ দিন বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারে দুর্জয়, দূরন্ত, নির্ভিক- এই মূল মন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট পুনর্মিলনী উপলক্ষে কুচকাওয়াজ আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করে। প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক ও উন্নত বাহিনীতে পরিণত করা হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদের গড়তে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই জাতির গঠনমূলক কর্মকান্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকি, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্প, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং থানচী-আলীকদম সড়ক নির্মাণসহ জাতীয় কার্যক্রমে সেনাদের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সদস্যরা নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালনে সক্ষম হবে। কর্মজীবনে সব ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা। যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে। সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাসদস্যরা নিরলসভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটি উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার জন্য বদ্ধপরিকর। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সার্বিক দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুগোপযোগী উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামাদি সরবরাহ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও উন্নত প্রশিক্ষণ সামগ্রী সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণসহ সময়োচিত সব পদক্ষেপ গ্রহণে আমাদের সরকার সদা সচেষ্ট। সেনাবাহিনীতে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া রিক্রুট প্রশিক্ষণকে আরও আধুনিকায়ন এবং যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকার সব সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধাদির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করে যাচ্ছে। ক্যাডেটদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল বৃদ্ধি করা হয়েছে, যেখানে ক্যাডেটরা বিভিন্ন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার সুযোগ লাভ করেছে। রিক্রুটদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ফরমেশনে প্রশিক্ষণ সুবিধাদি সম্প্র্রসারণ করা হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সদস্যদের উদ্দেশ্যে দরবার নেন ও শহীদদের স্মরণে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভ 'বীর গৌরব'-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বিপস্নব বিজয় তালুকদার, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, রাজশাহী পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।