ঢাকার বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয়তলায় 'কাচ্চি ভাই' রেস্তোরাঁয় অগ্নিকান্ডে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ার ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারসহ তার পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার কথা শুনে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন মোবারকের বৃদ্ধা মা হেলেনা বেগম। তার কান্না কিছুতেই থামছে না। কোনো সান্ত্বনাতেই তাকে থামানো যাচ্ছে না। জ্ঞান ফিরে আসলেই মুখে তার একটি কথা- 'আমি তো আমার ছেলে ও তার পরিবারের কারো মুখ দেখতে পাব না।'
হেলেনা বেগম সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ার মৃত সৈয়দ আবুল কাশেমের স্ত্রী। হেলেনা বেগমের ৩ ছেলে এবং ১ মেয়ের মধ্যে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার দ্বিতীয় সন্তান। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয়তলায় 'কাচ্চি ভাই' নামে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে হেলেনা বেগমের ছেলে, পুত্রবধূ, দুই নাতনি ও এক নাতিসহ সবাই নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার (৪২), পুত্রবধূ স্বপ্না বেগম (৩৮), দুই নাতনি সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া (১৭) ও সৈয়দা নূর (১৫) এবং একমাত্র নাতি সৈয়দ আবদুলস্নাহ (৭)।
বৃহস্পতিবার রাতেই পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি জানলেও সৈয়দ মোবারকের মা হেলেনা বেগম অসুস্থ হওয়ায় তাকে জানানো হয় মোবারক অসুস্থ। বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা দেখে ও মায়ের মন ঠিকই তিনি বুঝে গেছেন তার ছেলে আর বেঁচে নেই।
রাত থেকেই তিনি বিলাপ করতে থাকেন। যাকে সামনে পান তাকেই বলেন, 'আমার ছেলেরে কেউ আইন্না দেউ। কেউ আমার
ছেলেরে আইন্না দিতার বা। আমার ত সব শেষ। ছেলে, বৌ, নাতি-নাতিন কেউ নাই। আমি অহন কেমনে বাঁচুম। তোমডা কেউ হেরারে আইন্না দেও। হে আলস্নাহ তুমি আমারে না নিয়া আমার পুতেরে কেন নিলা।' মায়ের এই হৃদয়বিদারক বিলাপে পুরো আকাশ বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠছে।
স্বজনরা বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নিহত ৫ জনের লাশ বাড়িতে এসে এলে হাজারো শোকার্ত মানুষের ভিড় জমে।
মরদেহগুলো বাড়িতে আসার পর হেলেনা বেগমের বিলাপ আরও বেড়ে যায়। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, 'আমার পুতসহ পুরো পরিবার আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। আমি বেঁচে থেকে আর কী করুম। আমার ছেলেকে রেখে আলস্নাহ আমারে নিয়ে যাইত গা। আমি এই শোক সইব কী করে?'
এদিকে অগ্নিকান্ডে নিহত সৈয়দ মোবারক হোসেন ও তার স্ত্রী সন্তানদের লাশ দাফন করার জন্য বাড়ির পাশেই পাশাপালি খোঁড়া হয়েছে ৫টি কবরে দাফন করা হয়েছে।
সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের আত্মীয় নেসার আহমেদ জানান, প্রায় ১০ বছর আগে মোবারক হোসেন ইতালিতে চলে যান। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। সেখানে তার চারটি কসমেটিকসের দোকান আছে। তিনি ইতালিতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। তাই স্ত্রী ও সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের ইতালিতে যাওয়ার ভিসাও হয়ে গিয়েছিল। দেড় মাস আগে ছুটি নিয়ে তিনি ইতালি থেকে দেশে ফিরেন তার স্ত্রী-সন্তানকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার তাদের গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিল। তবে তারা আসছেন লাশ হয়ে।
সৈয়দ মোবারকের চাচাতো ভাই মোস্তাফিজ ও ফয়সাল জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সৈয়দ মোবারক তার স্ত্রী স্বপ্নাসহ ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসা থেকে বের হন 'কাচ্চি ভাই' রেস্তোরাঁয় ডিনার করতে। পরে সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সবাই মারা যান।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল আলম ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি তিনি শুনে শুক্রবার সকালে এসিল্যান্ডকে নিহতদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, 'নিহতদের পরিবারকে বলা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।'