বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) প্রথমবার শিরোপা জিতেছে ফরচুন বরিশাল। শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে শিরোপা তুলে নিয়েছে তামিম ইকবালের দল। অপরদিকে পঞ্চম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে কুমিলস্নার। বিপিএলের সবচেয়ে সফল দল কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স। প্রতিযোগিতার চারবারের শিরোপাজয়ী তারা।
শুক্রবার নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান করে কুমিলস্না। জবাবে এক ওভার হাতে রেখেই ৬ উইকেটে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বরিশাল। ২০২২ সালে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফাইনালে ১ রানে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল ফরচুন বরিশাল।
রংপুরকে হারিয়ে বিপিএল দশম আসর শুরু করেছিল ফরচুন বরিশাল। পরের তিন ম্যাচে টানা পরাজয়। পেস্ন অফ নিশ্চিতে কীর্তনখোলা পাড়ের দলটিকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল নিজেদের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। পেস্ন-অফে আর ঘুরে দাঁড়াতে হয়নি তাদের। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে, সেখানে রংপুর রাইডার্সকে ফাইনাল নিশ্চিত করা। শিরোপার মহারণে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স পাত্তাই দেয়নি দলটি। বল হাতে ধমিয়ে রাখার পর ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিল বরিশালের ক্রিকেটাররা।
৪৬ ম্যাচের টুর্নামেন্ট শেষে সেরা ব্যাটারের খেতাবটি বসেছে তামিমের নামের পাশে। ১৫ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ৪৯২ রান করেছেন বরিশাল অধিনায়ক। তিনটি ফিফটিসহ ৩৫.১২ গড়ে তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১২৭.১৩। ১৪ ম্যাচে ৪৬২ রান নিয়ে দুইয়ে কুমিলস্নার তাওহিদ হৃদয়। দুই ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিসহ ৩৮.৫ গড়ে ১৪৯.৫১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন তিনি।
১৪ ম্যাচে ৩৯১ রান নিয়ে
তিনে থেকে শেষ করেন কুমিলস্নার অধিনায়ক লিটন দাস। এলিমিনেটর থেকে বাদ পড়া চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের তানজিদ হাসানের সংগ্রহ ১২ ম্যাচে ৩৮৪ রান। সেরা পাঁচে আরেক নাম বরিশালের মুশফিকুর রহিমের। ১৫ ম্যাচে ৩৭৯ রান করেছেন তিনি।
বোলারদের মধ্যে ১২ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে সবার উপরে শরিফুল ইসলাম। দল গ্রম্নপ পর্ব থেকে ছিটকে গেলেও বল হাতে আগুন ঝরানো পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন তিনি। ১৩ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে দুইয়ে রংপুর রাইডার্সের সাকিব আল হাসান। তিনে আছেন ১৬ উইকেট নেওয়া তারই সতীর্থ মেহেদী হাসান। ১৫টি করে উইকেট নিয়েছেন বরিশালের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও চট্টগ্রামের বিলাল খান।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বরিশালকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেয় তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের ব্যাট থেকে আসে ৭৬ রান। ২৬ বলে ৩৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম। মঈন আলীর বলে বোল্ড আউট হন তিনি। ৭৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বরিশাল।
তামিমের আউটের পর বেশিক্ষণ পিচে থাকতে পারেননি মিরাজও। মঈন আলীকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন তিনি। ২৬ বলে ২৯ রান করে আউট হন এই ডান হাতি ব্যাটার।
তিনে ব্যাট করতে এসে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন কাইল মেয়ার্স। ৩০ বলে ৪৬ রানে মেয়ার্স আউট হলেও ততক্ষণে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বরিশাল। ১৭ বলে ১৩ রান করে আউট হন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত মিলারের ৮ ও মাহমুদউলস্নাহর ৭ রানে ভর করে বল এবং উইকেট হাতে থাকতেই প্রথমবার বিপিএলের শিরোপা জিতল দক্ষিণ অঞ্চলের দলটি। কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে মুস্তাফিজ এবং মঈন আলী দুটি করে উইকেট শিকার করেন। কাইল মেয়ার্স ম্যাচসেরা হয়েছেন।
আসরজুড়ে দাপট ছিল কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটারদের। তবে ফাইনালে এসে ছন্নছাড়া ভিক্টোরিয়ান্স ব্যাটিং লাইনআপ। একাধিক ব্যাটার উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি।
কুমিলস্নাকে শুরুতে চাপে ফেলেছিল ফরচুন বরিশাল, তাতে অল্প রানেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। চাপ সামলে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন দলকে টেনে তুলেন। এরপর আন্দ্রে রাসেলের ক্যামিওতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় লিটন দাসের দল। তবে তাওহিদ হৃদয় ও লিটন কেউই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। ১৪ বলে রাসেল করেন ২৮ রান। ২৩ বলে ২০ রান করে তাকে সঙ্গ দেন জাকের আলি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় কুমিলস্না। কাইল মেয়ার্সের তৃতীয় বলে সুনীল নারিনের ক্যাচ ছেড়ে দিলেও পঞ্চম বলে আর সুযোগ হাতছাড়া করেননি ওবেদ ম্যাককয়। শর্ট ফাইন লেগে দারুণ ক্যাচ নেন ক্যারিবিয়ান পেসার। পরের ওভারে সাইফউদ্দিনকে পিটিয়ে ১৪ রান তোলেন তাওহিদ হৃদয়-লিটন দাস জুটি।
হৃদয় বিদায় নেন চতুর্থ ওভারে। জেমস ফুলারের বলে ডিপ থার্ডম্যান অঞ্চলে তার ক্যাচ নেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। ১০ বলে ১৫ রান করেন কুমিলস্নার এ ব্যাটার। মারতে থাকা লিটন দাস ফুলারের বলে নান্দনিক ভাবে কাট করলেও বল সীমানা ছাড়া হয়নি। তা লুফে নেন রিয়াদ। ১২ বলে ১৬ রান করেন কুমিলস্না দলপতি।
ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা জনসন চার্লস এদিনও রান পাননি। শম্বুকগতির ইনিংসে ১৭ বলে ১৫ রান করে ম্যাককয়ের ওভারে আউট হন তিনি। এরপর মঈন আলিকে নিয়ে ইনিংস ধরে রাখায় মনোযোগী হন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। মঈন মাত্র ৩ রান করে রানআউট হন মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ এক থ্রোতে।
পাঁচ উইকেট চলে যাওয়ার পর জাকের আলিকে নিয়ে কুমিলস্নার সংগ্রহ একশ পার করেন মাহিদুল। বিপদের সময় হাল ধরেও তিনি আউট হন খুবই বাজেভাবে। সাইফউদ্দিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল লেগে খেলতে গিয়ে উইকেট উড়ে যায় তার। ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন মাহিদুল। রাসেলের ইনিংসে ছিল ৪টি ছয়ের মার।
ফরচুন বরিশালের হয়ে দুই উইকেট শিকার করেন জেমস ফুলার। এছাড়াও কাইল মেয়ার্স, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং ওবেদ ম্যাকয় একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৫৪/৬ (সুনীল নারিন ৫, লিটন ১৬, তাওহিদ ১৫, জনসন ১৫, মাহিদুল ৩৮, মঈন ৩, জাকের আলী ২০*, রাসেল ২৭*, মেয়ার্স ১/২৬, তাইজুল ০/২০, সাইফউদ্দিন ১/৩৭, ফুলার ২/৪৩, ওবেদ ১/২৪)।
ফরচুন বরিশাল: ১৯ ওভারে ১৫৭/৪ (তামিম ৩৯, মিরাজ ২৯, মেয়ার্স ৪৬, মুশফিকুর রহিম ১৩, মাহমুদউলস্নাহ ৭*, মিলার ৮*; মুস্তাফিজ ২/৩১, মঈন আলী ২/২৮, নারিন ০/২১, তানভীর ০/২৪, ০/৩৩)।
ফল:ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা:কাইল মেয়ার্স