শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
এমএসএফ'র প্রতিবেদন

কারা হেফাজতে ফেব্রম্নয়ারিতে মৃতু্য হয়েছে ১৯ জনের

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কারা হেফাজতে ফেব্রম্নয়ারিতে মৃতু্য হয়েছে ১৯ জনের

চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি মাসে দেশে কারা হেফাজতে ১৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। গত মাসেও (জানুয়ারি) এ সংখ্যা ছিল ১৯। ফেব্রম্নয়ারি মাসে কারা হেফাজতে মৃত ১৯ ব্যক্তির মধ্যে ৯ জন কয়েদি ও ১০ জন হাজতি। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই এ প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনাই স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয় বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। এদিন দেওয়া প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে ১ থেকে ২৯ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাতজন এবং গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, বগুড়া জেলা কারাগার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার, নারায়ণগঞ্জ কারাগার, নোয়াখালী জেলা কারাগার, চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার, নওগাঁ জেলা কারাগার, ঝিনাইদহ জেলা কারাগার এবং মৌলভীবাজার কারাগারে একজন করে মারা যান।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম

কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রুবেল দের (৩৮) কারাগারে নির্যাতনে মৃতু্য হয়েছে বলে পরিবার দাবি করেছে। অন্যদিকে বগুড়া জেলা কারাগারে ধর্ষণ মামলার হাজতি ইকবাল হোসেনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দরের স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি তুষার নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে একটি খালি ওয়ার্ডে প্রবেশ করে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি হেফাজতে মৃতু্যর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।'

নারী ও শিশু নির্যাতন : এদিকে চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি মাসে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ২৯১টি ঘটনা ঘটেছে, যা আগের মাসের তুলনায় ২২টি বেশি বলে জানিয়েছে এমএসএফ। সংস্থাটি জানায়, জানুয়ারি মাসের চেয়ে ফেব্রম্নয়ারিতে ১১টি বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রম্নয়ারিতে ৪২টি ধর্ষণ, ১৩টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৩টি ঘর্ষণ ও হত্যা, ১১টি ধর্ষণচেষ্টা, ৩২টি যৌন নিপীড়ন, ৩১টি শারীরিক নির্যাতন, ৩টি নির্যাতন ও ৭০টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

সাংবাদিক নির্যাতন: এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী ফেব্রম্নয়ারি মাসের ৯টি ঘটনায় ১৩ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে আহত ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১০ জন এবং হুমকির সম্মুখীন ৩ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের সময় ছাত্র নামধারী ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান কয়েককর্মী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে অশোভন আচরণ ও অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। এ মাসের নয়টি ঘটনার তিনটি ক্ষমতাসীন দল, তিনটি ইউপি চেয়ারম্যান, দুটি ব্যবসায়ী ও একটি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা ছিল।

\হফেব্রম্নয়ারি মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়। এসব হয়েছে নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও সিলেটে। মামলাগুলোয় নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মানবাধিকার পরিস্থিতি: এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রম্নয়ারি মাসে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল আগের মতোই উদ্বেগজনক। দেশে রাজনৈতিক ও নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, হেফাজতে মৃতু্য, নির্যাতনে মৃতু্য, পুলিশের ভুলের কারণে এক বৃদ্ধার মৃতু্য এবং অপতৎপরতার মতো ঘটনা ঘটেছে। সাইবার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটছেই। সীমান্ত হতাহতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে, যা উদ্বেগজনক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে