সংসদে প্রধানমন্ত্রী
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার
'পণ্যের দাম নিয়ে গুজবে কান দেবেন না', 'তারাবি-সেহরিতে লোডশেডিং থাকবে না', 'জনগণ নজর রাখলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়'
প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
রোজায় নিত্যপণ্যের দাম ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, 'এসব পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলাসহ নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন, স্বস্তি আসবে, তেমনি পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে।'
বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাব দেন সরকারপ্রধান। এর আগে বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
বর্তমান সরকার জনগণের সরকার দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, 'জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। বিশ্ববাজারে কয়েকটি পণ্য যেমন- জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে।'
'গুজবে কান দেবেন না'
আলী আজমের সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে কোনো গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সবাইকে অনুরোধ করব গুজবে কান দেবেন না। সবাই সচেতন থাকলে আর গুজবে কান না দিলে তাহলে গুজব ছড়িয়ে কেউ সমস্যা তৈরি করতে পারবে না।'
আলী আজম তার প্রশ্নে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বছরের অন্য সময়গুলোতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও রজমানে ব্যতিক্রম দেখা যায়। এ সময় অতিরিক্ত মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী অনৈতিকভাবে খাদ্যপণ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির হীন প্রচেষ্টা চালান। এ প্রেক্ষাপটে রমজানে পণ্যমূল্য স্বস্তির মধ্যে রাখতে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট এবং বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের গুজবের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'মজুত যাতে করতে না পারে তার জন্য কী কী করণীয় আগেই জানিয়েছি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে মানুষের খাদ্য নিয়ে খেলতে না পারে সেজন্য যথেষ্ট সচেতন রয়েছি। সেই সঙ্গে বলতে চাই- বহু পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা পরনির্ভশীলতা কাটিয়ে উঠতে চাই। নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে চাই।'
জনগণ নজর রাখলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা মোবাইল কোর্টসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তারপরও যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে একটা কথা বলি। রমজান হচ্ছে কৃচ্ছ্রতা সাধনের মাস। রমজানে মানুষ যেন কম খাবার গ্রহণ করে, খাদ্য সংরক্ষণ করে। কিন্তু আমাদের এখানে দেখি যেন খাবার গ্রহণের বিষয়টি একটু বেড়েই যায়। প্রকৃতপক্ষে সেজন্য তো রজমান নয়। রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযম করতে হবে। বিশেষ কোনো একটা জিনিস না খেলে হবে না, রোজা রাখা যাবে না বা ইফতার করা যাবে না- এই মানসিকতাটা বদলাতে হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, '...ইদানীং দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম কিন্তু কমেছে। একেবারেই কমেনি তা নয়। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম যদি বেশি হয়ে যায় তহলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পান না। আবার যদি দাম বেশি বেড়ে যায় তাহলে নির্দিষ্ট আয়ের লোকের কষ্ট হয়। ভোক্তার জন্য কষ্ট হয়। এজন্য আমাদের দু'টি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। এ ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট সচেতন। শুধু সরকারই সব দেখবে সেটা তো নয়। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন তাদেরও একটা দায়িত্ব রয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ে সবাই সহযোগিতা করলে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে নিত্যপণ্যের মূল্য অসৎ উপায়ে বাড়াতে পারবেন না। জনগণকে আহ্বান করব তারা এ বিষয়ে নজর রাখলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়। আর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। আরও পদক্ষেপ নেব। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে শাস্তি দিচ্ছি। আমরা যথাসাধ্য করে যাচ্ছি।'
তারাবি-সেহরিতে লোডশেডিং থাকবে না
রমজানে তারাবির নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহের বিষয়ে নাটোর-১ আসনের আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, 'আমরা অনেক অর্থ ব্যয় করে বিদু্যৎ উৎপাদন করি। ভর্তুকি অর্থে তা বিতরণ করি। এখন বিশ্বব্যাপী তেল, এলএনজি ও পরিবহণসহ সবকিছুর মূল্য বেড়ে গেছে। তারপরও আমাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহের প্রচেষ্টা রয়েছে। এটা ঠিক যে যেহেতু আমাদের জ্বালানি তেল ও এলএনজির সংকট আছে। সেহেতু সময় সময়ে... তাছাড়া জানেন যে, যান্ত্রিক ব্যাপার... ইত্যাদি কোনো কোনো কারণে বিদু্যৎ উৎপাদন হ্রাস পায় বা ব্যাহত হয়। সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হঁ্যা, তারাবির নামাজ ও সেহেরির সময় বিদু্যতের সমস্যা হবে না। বরং বিদু্যৎ সাশ্রয়ের সময় যদি প্রয়োজন হয় দিনের কোনো এক সময় যখন চাহিদা কম থাকে তখন দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করা যায়। এতে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে, আর বিদু্যতে সংকট কিন্তু হবে না। বিশেষ করে তারাবি ও সেহেরির সময়ে সংকট হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা সেইভাবে থাকবে।'
একসময় দেশে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকলেও এখন সেই অবস্থা নেই উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'তবে আমার মনে হয় মাঝে মাঝে এটি (লোডশেডিং) থাকা ভালো। নাহলে মানুষ অতীতকে ভুলে যাবে। অন্তত উপলব্ধি করবে, কোথায় ছিলাম আর কোথায় আছি।'
সামাজিক আন্দোলন গড়ে দুর্নীতি মূলোৎপাটন করা হবে
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটেছে। তাই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ফলে গ্যাস চাহিদার সরবরাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছে না।'
জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা এ সময় তুলে ধরেন তিনি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি মূলোৎপাটন করা হবে।