পুলিশের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনসহ জনগণের সেবা করুন
প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি দমনসহ দেশের মানুষের সেবা অব্যাহত রাখার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন. 'আমি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বলব, আপনারা দেশের মানুষের সেবা করেন। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন, এটা হচ্ছে পুলিশের মূলমন্ত্র। কাজেই পুলিশ বাহিনী মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে- এটাই সবসময় আমাদের কাম্য।'
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ৬ দিনব্যাপী 'পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪'-এর উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'আজকে দেশের মানুষ পুলিশের প্রতি সে আস্থা রাখতে পারছে। কাজেই আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের সেবা করবেন, সেটাই আমরা চাই।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর এই ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে হলে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা একান্তভাবে অপরিহার্য।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশের মানুষ যখনই কোনো বিপদে পড়ে, তখনই আশ্রয় খোঁজে পুলিশের কাছে। কাজেই পুলিশ জনগণের বন্ধু, এটা সব সময় চলে আসছে এবং এটাকেই প্রতিষ্ঠা করা একান্তভাবে দরকার। সে কারণেই আমি মনে করি, আমাদের পুলিশ বাহিনী তাদের সততা, পেশাদারি, নিষ্ঠা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, ত্যাগ, বীরত্ব, দেশপ্রেম ও মানবীয় মূল্যবোধ নিয়েই জনগণের সেবা করবেন। পুলিশ বাহিনীকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলছি।'
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি পুলিশ সদস্যদের জনগণের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে আরও একনিষ্ঠ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
জাতির পিতা বলেছিলেন, 'তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও। তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও। তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা। বাংলার মানুষ চায় তারা শান্তিতে ঘুমাক।
তোমাদের কাছ থেকে আশা করে যে চোর, বদমাশ, গুন্ডা, দুর্নীতিবাজ তাদের ওপর অত্যাচার না করে। তোমাদের কর্তব্য অনেক বেশি।'
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার ভাষণের এই মর্মবাণী ধারণ করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য গভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কাজ করে যাবেন, এটাই তার প্রত্যাশা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশকে 'স্মার্ট পুলিশ বাহিনী' হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমরা অধিকতর দক্ষ, পেশাদার, যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের একটি স্মার্ট সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে দেখতে চাই। আমাদের সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট পুলিশ গঠনের রূপরেখাও রয়েছে। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ ধাপে ধাপে গ্রহণ করব। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা, তথা আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের এই অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে স্ব-স্ব স্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।'
পুলিশ বাহিনীকে অত্যাধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ পুলিশে ইতোমধ্যে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেরিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস) এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। কয়েকটি বিভাগীয় শহরে এসব ল্যাবের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগে এ ধরনের ল্যাব স্থাপন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সাইবার অপরাধ এবং এর সঙ্গে যুক্ত ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অপরাধ মোকাবিলায় সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপির সিটিটিসিসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। পুলিশের একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।'
জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-কে আরও সমৃদ্ধ করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পুলিশ সদস্যদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশ হাসপাতালের উন্নয়নে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঢাকা বিভাগে একটি বিভাগীয় হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অন্য বিভাগীয় শহরেও পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমে শিগগিরই দুটি হেলিকপ্টার যুক্ত হতে চলছে।'
প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে চড়ে বাংলাদেশ পুলিশের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে।
প্রধানমন্ত্রী সাহসী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৫ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম-বীরত্ব) ও ৬০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-বীরত্ব) প্রদান করেন। এ ছাড়া ৯৫ জন পুলিশ সদস্য বিপিএম সেবা পদক ও ২১০ জন পিপিএম সেবা পদক পেয়েছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।