শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

১৫ বছরে বিদু্যতের দাম বেড়েছে ১৪ বার

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
১৫ বছরে বিদু্যতের দাম বেড়েছে ১৪ বার

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যখন দেশের মানুষ দিশেহারা তখন দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদু্যতের দাম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রম্নয়ারি মাসে তিনবার বিদু্যতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। যার প্রভাব এখনো রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর ওপর। সবশেষ ফেব্রম্নয়ারি মাসের ২৭ তারিখে ফের ইউনিট প্রতি সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়ানো হলো- যা চলতি বছরের মার্চ থেকেই কার্যকর হবে। এ নিয়ে বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের মেয়াদে গ্রাহক পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৪ বার বাড়ানো হলো বিদু্যতের দাম। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১২ বার।

এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রম্নয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ হারে বাড়ানো হয় বিদু্যতের দাম। যা পরদিন (১ মার্চ) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিদু্যতের দাম ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ টাকা ৩৫ পয়সা। শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর (প্রথম ধাপ) ক্ষেত্রে ৪ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে হয় ৪ টাকা ৮৫ পয়সা। ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের (দ্বিতীয় ধাপ) ক্ষেত্রে ৬ টাকা ৩১ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের (তৃতীয় ধাপ) ৬ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের (চতুর্থ ধাপ) জন্য ৬ টাকা ৯৯ পয়সা

থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের (পঞ্চম ধাপ) জন্য ১০ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের (ষষ্ঠ ধাপ) ওপরে বিদু্যৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকের বিল ১২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা করা হয়।

এছাড়া সেচ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তার বাতিসহ অন্যান্য বিদু্যতের দামও বাড়িয়েছে সরকার। কৃষিতে ব্যবহৃত সেচযন্ত্রের বিদু্যতের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ টাকা ৮২ পয়সা, যা ৩১ জানুয়ারি বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৪ টাকা ৫৯ পয়সা। শিক্ষা, ধর্মীয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের বিদু্যতের দাম ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা ৬৪ থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৭ পয়সা করা হয়। পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্পে ইউনিটপ্রতি বিদু্যতের দাম ৯ টাকা ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৮৮, রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পে ৮ টাকা ৪৯ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৯১, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের ক্ষেত্রে ৮ টাকা ৪২ থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৮৪, বাণিজ্যিক ও অফিস ফ্ল্যাটে ১১ টাকা ৩৬ থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯৩ এবং নির্মাণ শিল্পের বিদু্যতের দাম ১৩ টাকা ২৩ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩ টাকা ৮৯ পয়সা।

এ নিয়ে ২০২৩ সালের দুই মাসে তিন দফা বিদু্যতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে লাইফলাইন গ্রাহকের ইউনিটপ্রতি খরচ বেড়েছে ৬০ পয়সা, ৭৫-৬০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদু্যতের ইউনিটপ্রতি দাম বেড়েছে ৬৬ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। এছাড়া তিন দফায় ইউনিটপ্রতি খরচ বেড়েছে সেচের বিদু্যতে সর্বোচ্চ ৬৬ পয়সা; শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দাতব্য ও হাসপাতালের ক্ষেত্রে ৯৫ পয়সা; রাস্তার বাতির জন্য ১ টাকা ২১ পয়সা; ব্যাটারি চার্জিংয়ে ১ টাকা ২০ পয়সা; বাণিজ্যিক অফিসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬৩ পয়সা ও নির্মাণ শিল্পের জন্য ১ টাকা ৮৯ পয়সা।

এদিকে বর্তমান সরকারের টানা ১৫ বছরের মেয়াদে গ্রাহক পর্যায়ে ১৪ বার বিদু্যতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আর পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১২ বার। অবশ্য মোট বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াটে।

২০১০ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদু্যতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। ২০১০ সালের মার্চে বিদু্যতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন গড় বিদু্যৎ বিল বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ৯২ পয়সা। পরের বছর (২০১১ সাল) গ্রাহক পর্যায়ে দুই দফায় ৫ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদু্যতের দাম। এতে বিদু্যতের গড় দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪ টাকা ৬৭ পয়সা। এভাবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কয়েক দফা বাড়ে বিদু্যতের দাম। মাঝে ২০১৮-২০১৯ এ বিদু্যতের দাম বাড়ানো হয়নি। এরপর ফের ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে বিদু্যতের দাম সব পর্যায়ে বাড়ানো হয়। তখন পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে প্রতি ইউনিট বিদু্যতের দাম ৭ টাকা ১৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সবমিলে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাস পর্যন্ত ১৪ বছরে বিদু্যতের দাম ১৩ বার বাড়ানো হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণকে অন্ধকারে রেখে ঘরে ঘরে বিদু্যৎ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সরকার উচ্চমূল্যে বিদু্যৎ কিনেছে। আবার কিছু ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার জন্য উৎপাদন না করেও বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট থেকে তুলে নিচ্ছে। ভর্তুকির নামে এক ধরনের লীলাখেলা, অনেকটা জাদুর ভেলকির মতো একদিক দিয়ে নিয়ে আরেক দিকে বের করা।

তবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যে কোনো দেশে জ্বালানির ওপরেই বিদু্যতের দাম ওঠানামা করে। কাজেই ওটার সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করতে হবে, এছাড়া উপায় নেই। বিদু্যতের দাম নিচের লেভেলে ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা থেকে ৭০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে