বাড়ল গ্যাস ও বিদু্যতের দাম

গ্রাহক পর্যায়ে বিদু্যতের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা, বিদু্যৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৭৫ পয়সা, গ্যাসের দাম চলতি মাস থেকে ও বিদু্যতের দাম মার্চ থেকে কার্যকর, জ্বালানি তেলের দামও মার্চের প্রথম সপ্তাহে সমন্বয় করা হবে

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রোজা ও গ্রীষ্মকাল আসার আগেই বিদু্যতের দাম প্রতি ইউনিটে ৩৪-৭০ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিদু্যতের দামের বিষয়টি কার্যকর করা হবে। মূলত, ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বের হওয়ার জন্যই বিদু্যতের 'দাম সমন্বয়' করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে, বিদু্যতের দাম বাড়ানোর আগে আরেক দফা বাড়ল বিদু্যৎ উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিদু্যৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের বর্তমান দাম ১৪ টাকা। নতুন করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। নতুন দাম চলতি ফেব্রম্নয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দামও মার্চের প্রথম সপ্তাহে সমন্বয় করা হবে। মঙ্গলবার সরকারের নির্বাহী আদেশে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিদু্যৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদু্যৎকেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশ জারি করে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই সময় সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদু্যৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। একই সময় শিল্পেও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তিন গুণ করা হয়, যা গত বছরের ফেব্রম্নয়ারি থেকে কার্যকর হয়। গত বছর ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে বিদু্যৎ খাতের গ্যাসের দাম ১৫ টাকা করা হয়েছিল। আর ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপনের সংশোধন হিসেবে মঙ্গলবার এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে। এদিকে, বিদু্যতের দাম প্রতি ইউনিটে ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিদু্যতের দামের বিষয়টি কার্যকর করা হবে। মূলত, ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বের হওয়ার জন্যই বিদু্যতের 'দাম সমন্বয়' করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জ্বালানি তেলের দামও মার্চের প্রথম সপ্তাহে সমন্বয় হবে। এখন থেকে 'ডায়নামিক প্রাইস' নীতি অনুসরণ করা হবে। যখন বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে অথবা কমলে সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ কিছুদিন পরপর তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রতিবছর শুধুমাত্র বিদু্যৎ খাতে সরকারকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় এবং জ্বালানির ক্ষেত্রে দিতে হয় ছয় হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, 'আগামী কয়েক বছর ধরে আমরা এই দামটা সমন্বয় করব, বিদু্যতের ক্ষেত্রে উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ দিতে হচ্ছে, সেখানে সমন্বয় করতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আগামী বছর আমাদের নিউক্লিয়ার চলে আসবে। ভারত থেকে কম দামে বিদু্যৎ আসছে। দুই বছরের মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াট সোলার এটার সঙ্গে যোগ হবে। কিন্তু এরপরও যে ভর্তুকিটা রয়ে যাবে, তা ডলারের দামের পার্থক্যের কারণে। সেই কারণেই এই দামটা আমাদের সমন্বয় করা দরকার।' ডলারের দাম প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, 'আমরা যখন কয়লার পাওয়ার পস্ন্যান্টগুলো নিয়ে আসছি, সেই সময় ডলারের যে ভ্যালু এবং কয়লার যে দাম ছিল, তা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রতি ডলারে প্রায় ৪০ টাকা পার্থক্য হয়ে গেছে।' যখন কয়লা পাওয়ার পস্ন্যান্ট ছিল, তখন ৭০-৮০ টাকা ধরে ডলারের ভ্যালু করছিলাম। এখন আমাদের সরকারিটার ভ্যালু ধরতে হয় ১১০ টাকা। বেসরকারিটা আরও বেশি দাম। সুতরাং, এই যে দামের তারতম্য, এটিকে আমাদের সমন্বয় করতে হবে।' বিদু্যতের ইউনিট প্রতি দাম বেড়ে যাওয়াকে 'দাম বৃদ্ধি' না বলে বারবার 'দাম সমন্বয়' বলছিলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'পৃথিবীর সব দেশেই জ্বালানির দামের ওপর বিদু্যতের দাম ওঠানামা করে। সুতরাং, এটার সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমরা এখন খুবই অল্প পরিমাণে... (বাড়াচ্ছি)। কম বিদু্যৎ ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতি ইউনিট ৩৪ পয়সা এবং উপরের লেভেলের (সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী) জন্য হয়ত ৭০ পয়সা...(বাড়ানো হবে)।' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের লাইফলাইন গ্রাহক আছে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ, তারা প্রতি ইউনিটে চার টাকা করে বিল দেয়। উপরের দিকে যারা, তাদের সাত টাকা করে চার্জ হয়। কিন্তু আমাদের গড় উৎপাদন খরচ ১২ টাকা। তাই, সরকারের একটা বড় অংশ এখানে ভর্তুকি হিসেবে যোগ হচ্ছে। এই ভর্তুকির পরিমাণ আরও বেশি বাড়ছে ডলারের দামের পার্থক্যের কারণে।' একবারে দাম বাড়ালে গ্রাহকরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, তাই বিদু্যতের দাম ধীরে ধীরে সমন্বয় করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা যদি সময়মতো, আস্তে-আস্তে, ধীরে-ধীরে এটার এডজাস্টমেন্টে না যাই, আমাদের টার্গেট হলো, আমরা আগামী তিন বছর এটিকে সমন্বয় করব। যাতে সহনীয় পর্যায়ে থেকে সমন্বয় হয়, সেটার একটা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। প্রাইসিংটাকে আমরা রি-এডজাস্টমেন্ট করতেছি।' মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিদু্যতের দামের ক্ষেত্রে সমন্বয় শুরু হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'গ্যাসের দামের এডজাস্টমেন্ট গ্রাহক পর্যায়ে হচ্ছে না, বিদু্যতের পর্যায়ে হচ্ছে। অর্থাৎ আবাসিক খাতেও গ্যাস ব্যবহারে দাম বাড়ছে না, ইন্ডাস্ট্রিতেও হচ্ছে না, বিদু্যতের গ্যাসের দাম ৭৫ পয়সা বাড়বে।'