নানা কারণে প্রতিনিয়তই দেশের বাজারে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ঊর্ধ্বমুখী এই বাজারে আজ একটি পণ্যের দাম বাড়ছে তো আগামীকাল বাড়ছে আরেকটি পণ্যের দাম। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্নমধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষকে।
মানুষের পুষ্টির অন্যতম মাধ্যম হলো ডিম, মাছ ও মাংস। কিন্তু গত এক বছর ধরে এসব পণ্য এখন আর সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে নেই। খাবারের দাম ও পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত মাছের দামও বাড়ছে। তবে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে ডিম ও মাংসের দাম। ফলে পরিবারের পুষ্টির জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ।
সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, ধূপখোলামাঠ বাজার, শ্যামবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বাজারে প্রতিটি মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
সোমবার এসব বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৭০০ থেকে ২৩০০ টাকা, রুই মাছ প্রকারভেদে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ২৫০ থেকে ১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০ থেকে১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
রায়সাহেব বাজারের মাছ বিক্রেতা নগেন বিশ্বাস বলেন, 'বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। মাছের দামও বেশি। ঘাটে মাছ নেই বললে চলে। ফলে ঘাটে দাম অনেক বেশি। আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনে আনি এজন্য বেশি দামে বিক্রি করি। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশ মাছের দাম। বাজারে দুই রকমের ইলিশ পাওয়া যায়। একটা সাগরের ইলিশ ও একটা নদীর ইলিশ। দাম বেশি নদীর ইলিশের। কিন্তু অনেকেই সাগরের ইলিশকে নদীর বলে বিক্রি করছে। আসলে মাছের খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আমাদের এখানে কিছু করার নেই। আগে যে ক্রেতা দুই কেজি মাছ নিতেন, দাম বাড়ায় সেই ক্রেতা নিচ্ছেন এক কেজি। এতে আমাদের লাভ কম হয়।'
শ্যামবাজারে নাজমুল নামে এক ক্রেতা বলেন, 'বাজারে এসে দেখি মাছের দাম অনেক বেশি। আগে যেখানে ৩৫০-৪০০ টাকায় এক কেজি রুই মাছ কিনতে পারতাম, এখন তা কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে ৪৫০-৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আগের মতো মাছ কিনতে পারছি না। এখনই বাজারের এই অবস্থা রোজার সময় কি জানি হয়। আমাদের মতো খেটেখাওয়া মানুষের কোনো দিকে স্বস্তি নেই। আজ মাছের দাম বাড়লে কাল বাড়ে চালের দাম। এভাবে কতদিন চলবে, কি করে সংসার চালাব জানি না।'
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছের দাম বাড়লেও উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে ডিম ও মাংসের দাম। পুষ্টির এই অন্যতম পণ্য দুটির দাম স্থিতিশীল থাকলেও যে দাম, তা নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়, হালি ৪৮ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ২১০ টাকা, আর হালি ৭০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২৫৫ টাকা, আর হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ধূপখোলা মাঠ বাজারে গরু ও খাসির মাংস বিক্রেতারা জানান, গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং বরকির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বাজারে মাংস কিনতে আসা রহিম মুনসি বলেন, 'ভাই জিনিসের যে দাম মাংস খাওয়া ভুলে যেতে হবে। এখন বিশেষ দিন ছাড়া মাংস কেনা হয় না। বিশেষ দিন বলতে ছুটির দিন, বাসায় মেহমান এবং শবেবরাত, ঈদ ইত্যাদি। আগে সপ্তাহে তিন দিন মাংস খাওয়া হতো এখন মাসে একদিন মাংস খাচ্ছি। তারপরও সেটা কিনতে হলে দুইবার ভাবতে হচ্ছে। আমরা এখন মাছ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ তারপরও কেন এতো দাম?'