বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

আজ পবিত্র শবেবরাত

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আজ পবিত্র শবেবরাত

সৌভাগ্যের রজনী শবেবরাত অর্থাৎ লাইলাতুল বরাত আজ। মহান আলস্নাহতাআলা এ রাতে বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আলস্নাহতাআলার দরবারে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাক-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের। একই সঙ্গে প্রয়াত আত্মীয়স্বজনসহ চিরবিদায় নেওয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

কোরআন-হাদিসের আলোকে পবিত্র শবেবরাত হচ্ছে- যেসব বরকতময় রজনীতে আলস্নাহপাক তার বান্দাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দান করে থাকেন, শবেবরাত তারই অন্যতম। আরবি 'শা'বান' শব্দটি একবচন, এর বহুবচন হল 'শা'বানাত শা'আ-বীন শা'বানিয়্যীন। এর অর্থ- বিক্ষিপ্ততা ছড়ানো ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হওয়া।

হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, এ মাসের নাম 'শা'বান' এজন্য রাখা হয়েছে যে, এ মাসে রোজা পালনকারীর সাওয়াব, মঙ্গল ও সৌন্দর্য শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিস্তার লাভ করে, যাতে রোজাদার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।

আরবি ১২ মাসের অষ্টম মাস শাবান। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি কোরআনের ভাষায়- লাইলাতুম মুবারাকা বা বরকতময় রজনী; আর হাদীসের ভাষায়-লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রজনী। তাফসিরের ভাষায় লাইলাতুছ্‌ ছাক বা সনদপ্রাপ্তির রাত্রি, লাইলাতুন নাজাহ তথা মুক্তি রজনী। এ রাতটির মর্যাদা, অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

সূরা দুখানের ১-৪নং আয়াতে আলস্নাহতায়ালা বলেন-হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বণ্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ।

এ আয়াতের তাফসির সম্পর্কে তাফসিরে জালালাইন শরিফে ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হলো লাইলাতুল

ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবেবরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরিফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাজিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।

তাফসিরে তাবারি শরিফ পৃষ্ঠা-২২, খন্ড ১০-এ বর্ণিত আছে- মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সব ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজিদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কম-বেশি হয় না।

তাফসিরে রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড ৫৯৮ পৃষ্ঠায় উলেস্নখ রয়েছে- আলস্নাহপাক রুজি-রোজগার ও রিজিক বণ্টনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার হজরত মিকাঈল (আ.)-এর ওপর, কার্যসমূহ ও বন্দেগির দায়িত্বভার প্রথম আসমানের ফেরেস্তা হজরত ইসরাইল (আ.)-এর ওপর, বিপদাপদ ও দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণের দায়িত্বভার হজরত আজরাইল (আ.)-এর ওপর অর্পণ করেন।

এ মাসে রোজা পালনের গুরুত্বের ওপর বোখারি ও মুসলিম, তিরমিজিসহ অনেক বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। অনুরূপভাবে এ মাসের চৌদ্দ তারিখ রাত তথা শবেবরাত সম্পর্কে ছিহাহ্‌ ছিত্তাহর উলেস্নখযোগ্য কিতাবাদিসহ নানা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে প্রমাণ মেলে।

হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) রাসূলে কারিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম হতে বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এরশাদ ফরমান- মধ্য শাবানের রাত্রিতে আলস্নাহপাক রহমতের তাজালিস্ন ফরমান এবং তার সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রম্নতা পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (ইবনে মাজাহ শরিফ পৃষ্ঠা ১০০ হাদিস নং-১৩৮৯, মিশকাত শরিফ-১১৫ পৃষ্ঠা)

হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে মহান আলস্নাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অতঃপর তার সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (ইমাম বায়হাকী 'শুয়াবুল ইমান'-এর হাদিস নং-৩৮৩৩)

গাউসূল আজম শেখ সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী (র.) তদ্বীয় 'গুনিয়াতুত ত্বালেবীন' নামক কিতাবে উলেস্নখ করেন : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন- আলস্নাহর হাবীব রাউফুর রাহীম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম ফরমান শাবানের মধ্যবর্তী রাতে হযরত জিব্রাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন- ইয়া সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আজ আপনার মাথা মোবারক আকাশের দিকে উত্তোলন করুন- কেননা আজ বরকতের রাত। আমি জিজ্ঞেস করলাম- কেমন বরকত? উত্তরে হজরত জিব্রাইল (আ.) বললেন- এই রাতে আলস্নাহপাক তিনশত রহমতের দরজা খুলে দেন। মুশরিক, জাদুকর, গণক, সর্বদা মদ্যপানকারী, ব্যভিচারী এবং সুদখোর ব্যতীত সবাইকে আলস্নাহপাক ক্ষমা করে দেবেন।

পবিত্র শবেবরাতের পবিত্রতা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে