মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমি চাই, আমার দেশের মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। আমাদের মতো যেন বিচারহীনতায় তাদের কষ্ট পেতে না হয়।
শনিবার সকালে 'দক্ষিণ এশিয়ার একবিংশ শতাব্দীর সাংবিধানিক আদালত: ভারত-বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা' শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার দেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় এবং দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সুনিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ যেন এগিয়ে চলে এবং ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব যেন চিরস্থায়ী হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সরকারের আসার পর থেকে মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায়, তার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করি।
শেখ হাসিনা বলেন, মানবাধিকারের কথা শুনি, ন্যায়বিচারের কথা শুনি। সেই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কি আমাদের ছিল না? আমি অনেকবারই হাইকোর্টে গিয়েছি, অনেক অনুষ্ঠানে গেছি। আমি যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি, আমি বারবার এই প্রশ্নটাই করেছি, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। আমরা বিচার পাব না?
তিনি বলেন, আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমরা বঞ্চিত থাকব। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পরে, অর্থাৎ আমাকেই ক্ষমতায় আসতে হলো ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
তিনি বলেন, আজকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতিটা হচ্ছে, সেটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে এবং একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আজকে এটা প্রমাণিত সত্য, মানুষের জীবনে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি, আর্থসামাজিক উন্নতি, এটা একমাত্র হতে পরে যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ হয় এবং দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকারই বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছে বলে উলেস্নখ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানে তো বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই আছে কিন্তু সেখানে আমাদের প্রশ্ন যে, আমরা কি অপরাধ
করেছিলাম? ১৯৮১ সালে ছয় বছর আমাকে প্রবাসে থাকতে হয়, কারণ তখনকার মিলিটারি ডিকটেটর আমাকে আসতে দেবে না দেশে। রেহানাকেও আসতে দেবে না এবং তার পাসপোর্টটাও রিনিউ করতে দেয়নি।
তিনি বলেন, 'সেই অবস্থায় আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার অবর্তমানে নির্বাচিত করা হয়, এক রকম জোর করে জনগণের সমর্থন নিয়েই আমি দেশে ফিরে আসি। আমি যখন আমার বাবা-মা, ভাইয়ের হত্যার বিচারের জন্য মামলা করতে যাই, সেখানে মামলা করা যাবে না। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটা কেমন ধরনের কথা?'
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় (ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়) এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে থ্রিডি অ্যানিমেশন সিনেমা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে থ্রিডি অ্যানিমেশন সিনেমা, নাম 'হাসিনা: দি আনটোল্ড স্টোরি'। এটি নির্মাণ করছেন রাতুল বিশ্বাস। সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে সিনেমার টিজার। ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, রাতুল বিশ্বাস জানান, 'হাসিনা: দি আনটোল্ড স্টোরি' সিনেমার গল্প শুরু হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে। দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের পরিকল্পনা পর্যন্ত।
সিনেমাটি নির্মিত হবে নাল স্টেশন স্টুডিও থেকে। তত্ত্বাবধানে থাকছে আইসিটি বিভাগ। আর সিনেমাটি নিয়ে ইতোমধ্যে তিনি দেখা করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে। মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, সিনেমাটি নির্মাণ করতে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে আইসিটি বিভাগ।
নির্মাতার কথায়, 'প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা নানা বই থেকে আমরা চিত্রনাট্য তৈরির চেষ্টা করছি। তবে চিত্রনাট্য চূড়ান্ত করা হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। কারণ তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন, সেই সময়ে কী ঘটেছিল, কীভাবে ঘটেছিল, কেমন ছিল তার মানসিক অবস্থা।'
রাতুল বলেন, 'এই সিনেমার গল্প আমরা হয়তো সবাই জানি। কিন্তু ভিজু্যয়ালটা দেখেনি অনেকেই। সিনেমাটি নির্মিত হবে উন্নতমানের টেকনোলজি দিয়ে। যেমনটা হয় হলিউডে। সিনেমা দেখে যেন মনে হয়, এটা রিয়েল শুট করা। এখানে থাকবে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার। আমরা এমন একটি প্রজেক্ট নির্মাণ করতে চাই, যা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে লড়তে পারি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সিনেমাটি দিয়ে অস্কারে ফাইট দেওয়া।'
জানা গেছে, 'দি আনটোল্ড স্টোরি'র ব্যাপ্তি হবে প্রায় তিন ঘণ্টা। এটি ডাবিং করা হবে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায়। সব ঠিক থাকলে আগামী ২০২৫ সালে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি দিতে চান নির্মাতা। এর সহপরিচালক হিসেবে আছেন আরটিবি রুহান, মিউজিকের দায়িত্বে আছেন সালমান জেইম।
'বঙ্গবন্ধু' অ্যাপের উদ্বোধন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী ও বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস সমৃদ্ধ 'বঙ্গবন্ধু' অ্যাপের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অ্যাপটি নির্মাণ করেছে দুর্বার টেকনোলজিস লিমিটেড।
শনিবার গণভবনে এই অ্যাপের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় এই অ্যাপ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই মানুষ জাতির পিতার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের মহান স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ডিজিটাল পস্নাটফর্ম তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসএম ফারুকী হাসান, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, লুৎফুর রহমান, রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, লে. কমান্ডার মসিউল, জামিলুর রহমান, মো সুমন মিয়া প্রমুখ।
\হ