সরকারবিরোধী আন্দোলন

মাঠে ফিরতে তিন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

হাসান মোলস্না
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আন্দোলন সফল না হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে সময় লাগছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন নিয়ে মাঠে ফেরার বিষয়ে ভাবছে না দলটি। কার্যকরী ফল পেতে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত, সংগঠনকে শক্তিশালী ও কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেই রাজপথে ফিরতে চায় দলটি। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন হয়ে গেলেও এর পরে টানা আন্দোলন করে সরকার পতন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। কিন্তু নির্বাচনের পরে তা করতে পারেনি। নেতাকর্মীদের মুক্তির পর স্বল্প সময়ের মধ্যে আবারো মাঠে নামার চিন্তাও ছিল। কিন্তু অধিকাংশ সিনিয়র নেতা মুক্তি পেলেও সরকারবিরোধী প্রবল আন্দোলন করার অবস্থায় নেই দলটি। এখন মাঠে নামলে আরও পিছিয়ে পড়তে হবে এমন বিবেচনায় তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সময় নিয়ে রাজপথে ফেরার কথা ভাবছে দলটি। এগুলো হচ্ছে- নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত, সংগঠনকে শক্তিশালী ও কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, রাজপথের কঠোর কর্মসূচিতে ফেরার বিষয়ে বিএনপিতে এখন কোনো ভাবনা নেই। তবে দলের নেতাকর্মীরা যাতে মনোবল না হারায় সেজন্য নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দলের অস্তিত্বের স্বার্থে কৌশলী কিছু কর্মসূচি দিবে বিএনপি। সেক্ষেত্রে দিবস ভিত্তিক ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইসু্যতেও কর্মসূচি দিবে তারা। বিদু্যতের দাম বৃদ্ধি ঘোষণা আসলে কর্মসূচি দেওয়া হবে। সূত্রমতে, বিপর্যস্ত দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে প্রথমে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে শুরুতে সারাদেশে কারাগারে থাকা সব নেতাকর্মীর মুক্তি করতে দল কাজ করছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনের কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী এরই মধ্যে মুক্ত হলেও এখনো প্রায় ৪ হাজার আটক আছেন। আটক হওয়া সব নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করতে তাদের সংবর্ধনা দিতে চায় দলটি। বিএনপিতে এই ধরনের উদ্যোগ বিগত সময়ে না হলেও এখন এর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন এর ফলে একের পর এক আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে হতাশা কর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সংগঠিত করা সম্ভব হবে। সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার পাশাপাশি বর্তমান সরকারও মেয়াদপূর্ণ করতে পারে এমন আভাসে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলছুট হতে পারে এমন আশঙ্কা আছে বিএনপিতে। তাই নেতাকর্মীদের ধরে রাখার বিষয়টি এখন দলে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে কোনো নেতাকর্মী অংশ নিলে তাদের ব্যাপারে দল নমনীয় থাকতে পারে। এছাড়া আন্দোলনে মামলা-হামলা নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকার ভিত্তিতে যথাযথ পদ দিয়ে মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের। দলীয় সূত্র মতে, রাজপথের আন্দোলেনের ইতিবাচক ফল ঘরে তুলতে সংগঠন শক্তিশালী করা বিকল্প নেই বলেও মনে করছে বিএনপি। এজন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নির্বাচনের পর থেকেই দল ও অঙ্গ সংগঠনের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপির হাইকমান্ডও ইতোমধ্যে এক দফার আন্দোলনে কাঙ্ক্ষিত ফল না আসার কারণ চিহ্নিত করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে কার্যকর ও প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি বলে মনে করে দলটি। এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে সক্রিয়দের দিয়ে সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অঙ্গ সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনা হতে পারে। তবে যেহেতু দল ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন, সে কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে কিছুটা সময় নিতে পারে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে যাদের কারাদন্ড হয়েছে, তাদের কী হবে- এই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া জোরেশোরে শুরু হবে। আসন্ন রমজান মাসকে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের মাস ধরে ওই মাস থেকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চালু হতে পারে। বেশ সময় ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে। নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত ও সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। সর্বশেষ আন্দোলন সফলে মাঠ পর্যায়ের শক্তি সামর্থ্যের চেয়ে কূটনৈতিক বিষয়ে দেখভাল করা নেতাদের কাছে প্রত্যাশা বেশি ছিল দলটির নেতাকর্মীদের। কিন্তু নির্বাচনের আগে পরে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে প্রত্যাশিত বার্তা না আসায় সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছে তারা। সঙ্গত কারণে এই প্রক্রিয়া নতুন নেতাদের যুক্ত করতে চাপে আছেন দলটির হাইকমান্ড। বিএনপি নেতারা মনে করেন, 'এক তরফা' নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করলেও জাতিসংঘসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়ে তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরেনি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ এবং সুশাসনের অভাবের বিষয়টি বিদেশিদের কাছে সুস্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরীণ ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান কাজে লাগাতে পারলে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হবে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, সরকার পতন কার্যকরী আন্দোলনে ফিরতে বিএনপির বেশ সময় লাগবে। এখনই বা আগামী তিন মাসে এ নিয়ে দল ভাবছেই না। এবিষটি সম্প্রতি কারামুক্ত নেতাদের কথায় বেশ পরিষ্কার হয়। কারামুক্ত নেতারা বিভিন্ন ফেরামে তাদের জেল জীবনের নানা বিষয় বর্ণনা করছেন। তাতে এবারের কষ্টের বিষয়টি সামনে আসছে। কারাগার থেকে বের হয়ে বেশিরভাগ নেতাকর্মীই নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন এবং করছেন। অনেকের শরীরে বাসা বেঁধেছে জটিল রোগ। নেতাকর্মীরা ছাড়াও দ্রম্নত সময়ের মধ্যে সিনিয়র নেতাদের অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদেশে যাবেন। সঙ্গত কারণে সহসাই বড় ধরনের আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি আসছে না তা বলা যায়। তবে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইসু্যতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মার্চে বিদু্যৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত 'গণবিরোধী'। বিদু্য ও জ্বালানি দাম বৃদ্ধি হলে বিএনপি কর্মসূচি দেবে।