মিয়ানমারে জান্তা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে :জাতিসংঘ
প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানমারে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জয়যাত্রা থামাতে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন জান্তা। প্রায় চার মাস আগে সংঘাত শুরুর পর থেকে দেশটির বেসামরিক লোকজনদের ওপর জান্তা বাহিনীর হামলার হার দ্বিগুণ হয়েছে। জাতিসংঘের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তথ্যসূত্র : ইরাবতী, রয়টার্স, এএফপি
অ্যান্ড্রুজ বলেন, সাম্প্রতিক সংঘাতে বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা জান্তাকে আরও বেপরোয়া-বিপজ্জনক করে তুলছে। আমাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, গত তিন-চার মাসে মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদেরও ওপর জান্তা বাহিনীর হামলার হার বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।'
২০২১ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি অভু্যত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি'র নেতৃত্বাধীন
এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং এই অভু্যত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি জনতা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্রপন্থিদের একাংশ জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে।
২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএমভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা'আং
ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে 'থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স' নামেও পরিচিত।
গত প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত পাঁচটি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে পিডিএফ। অন্যদিকে, এসব শহর ও প্রদেশের দখল হারানোর পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদেরও হারিয়েছে জান্তা।
জনবল সংকট দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি সাধারণ নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জান্তার এই পদক্ষেপকে নাগরিকদের ওপর জুলুম চালানোর নতুন পদক্ষেপ হিসেবে বিবৃতিতে উলেস্নখ করেছেন টম অ্যান্ড্রুজ। বিবৃতিতে সাবেক এই মার্কিন আইনপ্রণেতা বলেন, 'সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করার পর থেকে মিয়ানমারের তরুণ-তরুণীরা রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এবং প্রতিদিন শত শত তরুণ-তরুণী সীমান্ত পথ দিয়ে মিয়ানমার ছেড়ে পালাচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে এই হার আরও বাড়তে পারে।'
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, 'অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভিত্তিতে তৎপরতা চালানো প্রয়োজন।