রাজধানী ঢাকার মিরপুরের বাসায় 'অসুস্থ' হয়ে পড়ার পর এক দিনের ব্যবধানে মারা গেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এক পরিচালক ও তার স্ত্রী। তবে কী কারণে তাদের মৃতু্য হয়েছে, সে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক সৈয়দ নাজমুল আহসান (৫৫) এবং তার স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলম (৪৫) মিরপুর -২ নম্বর সরকারি অফিসার্স কমপেস্নক্সের বাসায় থাকতেন।
বুধবার বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দুইজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক নাজমুল আহসানকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান মিরপুর থানার পরিদর্শক এসএম কামরুজ্জামান। তিনি আরও জানান, সেদিন রাতে নাহিদ বিনতে আলমকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান।
পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, 'তাদের শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের পর মৃতু্যর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।'
পুলিশ কীভাবে ওই দম্পতির মৃতু্যর খবর পেল, তা জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই মারা গেছেন। সে কারণে হয়ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে।'
তাদের ভর্তি টিকিটে 'পুলিশ কেইস' লেখা ছিল কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, 'বিষক্রিয়ার কারণে
পুলিশ কেইস লেখা থাকতে পারে, ময়নাতদন্তের পর সবকিছু জানা যাবে। এটা ফুড পয়জনিং থেকে না অন্য কোনো কারণে হতে পারে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, নাজমুল আহসানের 'কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট' হয়েছে। তার স্ত্রীর কী হয়েছে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা আর কোনো কথা বলেননি।
এদিকে, মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সী সাব্বির আহমেদ বলেন, বুধবার মিরপুর-২ অফিসার্স কমপেস্নক্সে বাসায় স্বামী-স্ত্রী উভয় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে পরিবারের লোকজন নাজমুল আহসানকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় অসুস্থ স্ত্রী নাহিদ বিনতে আলমকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তিনি আরও জানান, সৈয়দ নাজমুল আহসান পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক ছিলেন। এই দম্পতির দুই মেয়ে। একজনের বয়স ১২, আরেক জনের বয়স ১৫। তাদের কী কারণে মৃতু্য হয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোলস্না বলেন, উভয়ের মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মৃত দম্পতির মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হচ্ছে।
নাজমুল আহসানের ভাই সৈয়দ আবু জাফর জানান, তার ভাইয়ের মৃতু্যতে মিরপুর মডেল থানায় একটি অপমৃতু্য মামলা হয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী ও সচিবের শোক : এদিকে, সৈয়দ নাজমুল আহসানের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
বৃহস্পতিবার পৃথক পৃথক শোকবার্তায় তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোকবার্তায় পরিবেশমন্ত্রী জানান, নাজমুল আহসান পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের বায়ুমান শাখার পরিচালক পদে কর্মরত থাকাকালীন দেশের বায়ুমানের উন্নয়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন। তার মতো একজন সদালাপী কর্মকর্তার অকাল মৃতু্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
সৈয়দ নাজমুল আহসান ১৯৯৬ সালে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগ দেন। ২০১৭ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে পরিচালক হন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা সদরে।