মহান ভাষাশহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মানুষের ঢল নামে অমর একুশে বইমেলায়। লাখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে প্রাণের এই মেলায়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বইমেলায় ছুটেছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। মেলায় আগত বেশিরভাগের পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও শাড়ি। পোশাকে প্রাধান্য শহীদ দিবসের আবহ। এদিন সকাল ৮টায় খুলে দেওয়া হয় মেলার দুয়ার। মাসব্যাপী বইমেলার সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন ছিল এদিন। মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় আগতদের অনেকেই দিনভর সময় কাটান মেলা প্রাঙ্গণে। এর পরপরই বইপ্রেমীরা মেলায় আসতে শুরু করেন। বিকাল ৪টা নাগাদ মেলা প্রাঙ্গণ জমে ওঠে শিশু-কিশোর-প্রবীণদের প্রাণচঞ্চল উপস্থিতিতে। যেন সব পথ এসে মিশে গেছে বইমেলায়!
একুশে ফেব্রম্নয়ারি ছুটি হওয়ায় এদিন শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য, থেকে দোয়েল চত্বর পুরো সড়কজুড়েই নেমেছিল মানুষের মিছিল। মেলায় সব প্রবেশপথেই ছিল লম্বা লাইন। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরই মেলায় ঢুকতে পারছিলেন দর্শনার্থীরা। জনস্রোতের চাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও হিমশিম খেতে হয়।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলে বিক্রয়কর্মীদের যেন দম নেওয়ার মতো ফুরসত নেই। ছোট বড় প্রায় সব প্রকাশনীতেই ছিল পাঠকের ভিড়। পাঠকের এমন আগমনে হাসিমুখ ছিল প্রকাশক-লেখক-বিক্রয়কর্মীদের মুখে।
এছাড়া অন্যদিন লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গণে দর্শনার্থী দেখা না গেলেও বুধবার প্রাণ ফিরে পায় লিটল ম্যাগ চত্বর। এখানেও ছিল বইপ্রেমীতে ঠাসা। বুধবার বেশিরভাগ লেখকই এসেছিলেন মেলায়।
বুধবার বিকাল ৪টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলায় উপচেপড়া ভিড় ছিল দর্শনার্থীদের। এ সময় নিজের বইটি হাতে নিয়ে পাঠকদের বই কিনতে উৎসাহিত করছিলেন 'হিরো আলম'। হঠাৎ একদল দর্শনার্থী তাদের দুয়োধ্বনি দিয়ে তাড়া করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুলিশ সদস্যরা তাদের নিরাপত্তা
বেষ্টনী দিয়ে টিএসসি গেট দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে যেতে সাহায্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন,
সে সমাজে লজ্জাজনক একটি সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করছে। তারা যা ইচ্ছা তা করে ভাইরাল হয়েই আসে বই প্রকাশ করতে। এজন্যই সচেতন মানুষ তাদের তিরস্কার করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সময় নানা কর্মকান্ডের ও বারবার নির্বাচন করে আলোচিত 'হিরো আলম'। গত কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত মুস্তাক-তিশা, সাবরিনাকে একইভাবে বের করে দেয় সাধারণ দর্শনার্থী ও পাঠকরা।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, একুশে ফেব্রম্নয়ারি মেলায় এসেছে ২৩৪টি নতুন বই।
মহান একুশে ফেব্রম্নয়ারি উপলক্ষে বুধবার দিনভর নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর। একুশে বক্তৃতানুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন।
বুধবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, শিশুসাহিত্যিক ওয়াসিফ এ খোদা, কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ এবং শিশুসাহিত্যিক ইমরান পরশ।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন:বিকাল ৫টায় 'প্রথম কবিতার বই : অনুভূতির দলিল' এই প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আশনা হাবিব ভাবনা, স্নিগ্ধা বাউল, সঞ্জয় ঘোষ, রিপন আহসান রিতু, মীর রবি, মাশরুরা লাকী ও মিনহাজুল হক। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন কবি ফারহান ইশরাক ও কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, মো. হাসানুজ্জামান কলেস্নাল, আমিনুর রহমান সুলতান, হাসানাত লোকমান, বদরুল হায়দার, ফারহানা রহমান, সঞ্জীব পুরোহিত, নূর-এ-জান্নাত, শিমুল পারভীন এবং আরেফিন রব। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, রূপা চক্রবর্তী এবং আহ্কামউলস্নাহ। এছাড়াও ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী' এবং মানজারুল ইসলাম সুইটের পরিচালনায় 'সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী'র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কল্যাণী ঘোষ, শিবু রায়, মহাদেব ঘোষ, মিথুন জব্বার, বাবু জব্বার, আব্দুল হালিম খান, স্বর্ণময়ী মন্ডল এবং জান্নাত-এ-ফেরদৌসী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন প্রিয়ব্রত চৌধুরী (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড), মনির হোসেন (গিটার) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
আজকের অনুষ্ঠান: আজ অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : আসাদ চৌধুরী এবং স্মরণ : জাহিদুল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাহমুদা আকতার এবং কামরুল হাসান। আলোচনায় অংশ নেবেন দিলারা হাফিজ, বায়তুলস্নাহ কাদেরী, খালেদ হোসাইন এবং মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ড. মুহম্মদ সামাদ।