রাজধানীর মালিবাগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করার সময় চিকিৎসকের অবহেলায় এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় করা মামলায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে (জেএস হাসপাতাল) শিশুমৃতু্যর ঘটনাটি ঘটে।
মারা যাওয়া শিশুর নাম আহনাফ তাহমিদ (১০)। বাবার নাম ফখরুল আলম। শিশুটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।
এদিকে তাহমিদের মৃতু্যর ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মোক্তাদির হোসেন ও মাহবুব হোসেন।
পুলিশের তথ্যমতে, মোক্তাদির জেএস হাসপাতালের মালিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিক সার্জন। মাহবুব একই হাসপাতালের অবেদনবিদ্যা (অ্যানেসথেসিওলজি) বিভাগের চিকিৎসক।
বুধবার সকালে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আওলাদ হোসেন বলেন, শিশুটির বাবা মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা করেন। চিকিৎসকের অবহেলায় তার সন্তানের মৃতু্যর অভিযোগ করেছেন তিনি। হাতিরঝিল থানায় করা এ মামলায় হাসপাতালটির মালিক
\হমোক্তাদির, অবেদনবিদ মাহবুব ও অস্ত্রোপচার বিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক আজাদকে আসামি করা হয়েছে। মোক্তাদির ও মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর ইশতিয়াক পালিয়ে গেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা তিন আসামির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্বজন ও পুলিশ সূত্র বলছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে ফখরুল ও তার স্ত্রী খায়রুন নাহার তাদের বড় সন্তান তাহমিদকে খতনা করাতে জেএস হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা শিশুটিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে অবেদন (অ্যানেসথেসিয়া) করে তার খতনা করেন। কিন্তু শিশুটির আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। রাত ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
শিশু তাহমিদের বাবা ফখরুল আবাসন নির্মাণ ব্যবসায়ী। তিনি পরিবার নিয়ে খিলগাঁও রেলগেটসংলগ্ন একটি বাড়িতে থাকেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তাহমিদ বড় ছিল। ফখরুল বলেন, আগে তিনি সপরিবার ডেনমার্কে থাকতেন। সেখানে তার বড় ছেলে তাহমিদের জন্ম হয়। পরে তিনি পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ছেলেকে হারিয়ে এখন তারা পাগলপ্রায়।
ফখরুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমার সুস্থ সন্তানকে মেরে ফেলা হলো। আমি চিকিৎসক মোক্তাদির ও ইশতিয়াককে পা ধরে বলেছি, ছেলেকে পূর্ণ অ্যানেসথেসিয়া দিয়েন না। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেননি। আমার সোনার টুকরা ছেলেটাকে তারা শেষ করে দিল।'
ফখরুল আরও বলেন, 'আমি চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।'
জেএস ডায়াগনস্টিক সিলগালা
এদিকে সুন্নতে খতনা করাতে এসে মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীর মৃতু্যর ঘটনায় অভিযান চালিয়ে সেটিতে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার জন্য হাসপাতালের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, কিন্তু এই হাসপাতালের শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে। যে কারণে তাদের অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে এসে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান। তিনি বলেন, 'আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শিশু আহনাফের মৃতু্যর ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা জেনেছি গতকাল সামান্য একটা মুসলমানির জন্য শিশুটিকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডা. ইশতিয়াক নামক একজন এই খতনার সার্জন ছিলেন, আর ডা. মাহবুব মুর্শেদ শিশুটির অ্যানেসথেসিওলজিস্টস ছিলেন। অভিযোগ অনুসারে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার সময় শিশুটিকে অজ্ঞান করার পর আর তার জ্ঞান ফেরেনি। পরে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা মারা হয়েছে।'
প্রসঙ্গত রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃতু্যর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের আরেক শিশুর মৃতু্যর অভিযোগ উঠল। ৫ বছরের আয়ানেরও অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর জ্ঞান ফেরেনি। সাত দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।