পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারাগারে ৯ হাজার ৩৭০ বাংলাদেশি শ্রমিক-প্রবাসী আটক রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বন্দি সৌদি আরবের কারাগারে।
সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বহির্বিশ্বের কারাগারে আটকদের বিষয়ে মিশনগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পর্তুগালে একজন, মিসরে ছয়, ইতালিতে ৮১, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫, কোরিয়ায় ছয়, শ্রীলংকায় জন, কাতারে ৪১৫, লিবিয়ায় ৯, স্পেনে ১৯, হংকংয়ে ১২২, সিঙ্গাপুরে ৬৬, ব্রম্ননাইয়ে ১৬, চীনের বেইজিংয়ে ১৮৪, কুনমিংয়ে সাত, আবুধাবিতে ৪০৪, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৯, সৌদি
আরবে পাঁচ হাজার ৭৪৬, মালয়েশিয়ায় ২১৯, আলজেরিয়ায় এক, থাইল্যান্ডে চার, লেবাননে ২৮, গ্রিসে ৪১৪, ইরাকে ২১৭, তুর্কিতে ৫০৮, মিয়ানমারে ৩৫৮, জাপানে দুই এবং জর্ডানে ১০০ জন আটক রয়েছেন।
বিদেশের কারাগারে আটক প্রবাসীদের মুক্তির ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ ও তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি মাস পর্যন্ত মোট এক হাজার ২২৬ বাংলাদেশিকে লিবিয়া থেকে, ফ্রান্স ও ইউরোপের অন্য দেশের জেলখানা থেকে ৫১ জনকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের জেলখানা থেকে আরও এক হাজার ৯৫০ জনকে ফেরত আনা হয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে কারাগারে আটক বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের দ্রম্নত মুক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করেন। বিভিন্ন দেশে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে আটক শ্রমিক-প্রবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ দ্রম্নততার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা ও পাবলিক প্রসিকিউশন অফিসের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রাখা হয়।
তিনি আরও জানান, জেলখানায় আটক প্রবাসীকর্মীদের আদালত কর্তৃক বিচারকালীন সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের একজন প্রতিনিধি বা আইন সহকারী কোর্টে উপস্থিত থেকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করে থাকে। বিভিন্ন অভিযোগে আটক শ্রমিক বা প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের চাহিদা মোতাবেক সংশ্লিস্নস্নষ্ট দেশের আইনজীবী-ল' ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে দূতাবাস সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। কারাগারে আটক শ্রমিক বা প্রবাসী কর্মীদের বিশেষ ও সাধারণ ক্ষমার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ তদবির করা হয়। কারাগারে আটক শ্রমিক-প্রবাসী কর্মীদের সাজার মেয়াদ শেষ হলে তাদের অতিদ্রম্নত দেশে প্রেরণের জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিশেষ ট্রাভেল পারমিট ইসু্য করা হয় ও টিকিট ক্রয় করা হয়। আর্থিক অভিযোগে আটক শ্রমিক বা প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক দায় পরিশোধ ও দেশে প্রেরণের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট দেশের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও দানশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে দূতাবাস যোগাযোগ করে থাকে।
এ ছাড়া মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দন্ড মওকুফের জন্য বাদীদের সঙ্গে দূতাবাসসমূহ সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে মার্জনার অনুরোধ সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র প্রেরণ করে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে সমঝোতা করে বস্নাডমানি/রক্তপণ পরিশোধপূর্বক মৃতু্যদন্ড মওকুফকরণের ব্যবস্থা করে। দূতাবাস প্রবাসে জেলে বন্দি বাংলাদেশিদের সেবাসমূহ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে।