কাল অমর একুশে ফেব্রম্নয়ারি

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আগামীকাল অমর ২১শে ফেব্রম্নয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকায় এক মাসের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে। এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে ছাত্ররা। এদিকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে রাতে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে ২০ ফেব্রম্নয়ারি এই সভায় উপস্থিত সদস্যরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেন। সভার একটি বড় অংশ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিলেও অনেকেই এতে সহিংসতার আশঙ্কায় বিপক্ষে মত দেন। তবে আন্দোলনরত ছাত্ররা ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রতিবাদ মিছিল করার সংকল্পে অটুট থাকেন। মূলত ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রম্নয়ারি অগ্নিঝরা 'একুশের প্রতীক্ষায় ছিল গোটা বাঙালি জাতি। সারা দেশে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরদিন প্রতিবাদের রূপ কী হয় তা নিয়ে একটা তুমুল আলোড়ন চলছিল মানুষের মনে। ছাত্রদের আন্দোলনের প্রস্তুতির তীব্রতা ও অনমনীয় ভাব দেখে পূর্ববঙ্গ সরকার জনমনে ভীতি ও ত্রাস সঞ্চারের চিরাচরিত পন্থাই গ্রহণ করেছিল। তবে এসব ভয়ভীতিতেও দমানো যায়নি ছাত্রদের। সরকারের ১৪৪ ধারা প্রবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১-এর কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কর্মপরিষদের বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অলি আহাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ এর বিরোধিতা করে। অলি আহাদ বলেছিলেন, 'এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। আগামীকাল (২১ ফেব্রম্নয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় যে ছাত্রসভা হবে, তাতে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে যদি রায় হয় তবে আমরা ভাঙার পক্ষে।' এ প্রসঙ্গে গাজীউল হকের লেখা থেকে জানা যায়- অলি আহাদ, মেডিকেল কলেজছাত্র সংসদের সহসভাপতি গোলাম মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোরাল বক্তব্য রাখেন। ফজলুল হক হলের সহসভাপতি শামসুল আলম এদের সমর্থক ছিলেন। ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক তার একুশের দিনলিপি গ্রন্থে লিখেছেন- 'ঢাকার ছাত্রসমাজের জন্য ২০ ফেব্রম্নয়ারি হয়ে ওঠে একটি টেনশনবিদ্ধ দিন। একটি ঘোষণা গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। মতভেদ তৈরি হয় ছাত্র যুবা ও রাজনীতিকদের মধ্যে। তখন বিকাল। সেক্রেটারিয়েট রোড ধরে এগিয়ে আসছে একটি ঘোড়ার গাড়ি, সামনে মাইক বাঁধা। ঢাকা তখনো রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি ও মুড়ির টিন মার্কা টাউন সার্ভিস বাসের শহর। ঘোড়ার গাড়িটা ফজলুল হক হল, ঢাকা হল এলাকা পার করে মেডিকেল ব্যারাক বাঁয়ে রেখে সোজা চলে যায় সলিমুলস্নাহ হলের দিকে। যেতে যেতে ঘোষণা- ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি। সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ। হুকুম ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেটের। বলতে হয়, মৌচাকে ঢিল। ভাসানীর 'কথার কথা' শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত হলো।' তিনি লিখেছেন- ঘোষণা শুনে ছাত্রাবাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আপাতত মেডিকেল ব্যারাক প্রাঙ্গণে স্স্নোগান ওঠে : '১৪৪ ধারা মানি না, মানি না'। কিছুক্ষণ পর অন্য ধারার আওয়াজ : '১৪৪ ধারা ভাঙব, ভাঙব'! পরে জানা যায়, আশপাশের ছাত্রাবাসগুলোয় একই মনোভাবের প্রকাশ। কিন্তু এ ঘটনা রাজনৈতিক নেতাদের ভীষণ বিপাকে ফেলে দেয়। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদে তাদের প্রাধান্য। পরিষদেও সমস্যা। বিপাকের কারণ, সামনে সাধারণ নির্বাচন। এ অবস্থায় রাজনৈতিক নেতারা সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না, পাছে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। এসব বিচারে ছাত্রদের সঙ্গে জাতীয় নেতাদের মতভেদ। তাই ১৪৪ ধারা না মানা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সে রাতেই সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক। সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙা নিয়ে তীব্র তর্কবিতর্ক। শেষ পর্যন্ত ১১/৩ (মতান্তরে ১১/৪) ভোটে সিদ্ধান্ত হয়, '১৪৪ ধারা ভাঙা হবে না'। এ সিদ্ধান্ত মূলত রাজনৈতিক নেতাদের, যেমন আবুল হাশিম, কামরুদ্দীন আহমদ, খয়রাত হোসেন, শামসুল হক এবং গোলাম মাহবুব, হেদায়েত হোসেন চৌধুরী প্রমুখ ছাত্র প্রতিনিধির। এর বিরুদ্ধে অর্থাৎ ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে ভোট দেন আবদুল মতিন, অলি আহাদ ও গোলাম মাওলা। রাজনৈতিক নেতাদের পিছুটান সত্ত্বেও ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রাবাসে ক্ষুব্ধ ছাত্রদের একুশের কর্মসূচি পালনে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের প্রকাশ ঘটে এবং তা ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই।