সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

৯ মার্চ জাপার সম্মেলন ডেকেছেন রওশন এরশাদ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
৯ মার্চ জাপার সম্মেলন ডেকেছেন রওশন এরশাদ

জাতীয় পার্টি 'চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে' মন্তব্য করে দলকে ফের 'সুসংগঠিত' করার লক্ষ্য নিয়ে আগামী ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন ডেকেছেন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা রওশন এরশাদ।

রোববার দুপুরে গুলশানে নিজের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রওশন বলেন, 'নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব

গ্রহণ করে আগামী ৯ মার্চ পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের ঘোষণা দিচ্ছি।'

৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।

নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে 'স্বেচ্ছাচারিতার' অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সেই প্রেক্ষাপটে ২৮ জানুয়ারি এক মতবিনিময় সভায় রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে 'অব্যাহতি' দেন। তবে রওশনের ওই দাবি 'আমলে নেননি' জিএম কাদের বা চুন্নু।

এর মধ্যে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে জিএম কাদেরকে এবং উপনেতা হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে স্বীকৃতি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে রওশন বলেন, 'কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা এবং এরশাদভক্ত সর্বস্তরের অগণিত নেতাকর্মী আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা সবাই মিলে সুন্দর একটি জাতীয় সম্মেলন উপহার দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আবার প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে চাই। কারণ দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতির অঙ্গনে জাতীয় পার্টির প্রয়োজনীয়তা এখন অপরিহার্য।'

দেশে গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ভিত শক্তিশালী করার জন্য জাতীয় পার্টি 'সংগ্রাম করে যাচ্ছে' দাবি করে রওশন বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চার প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে সময় মতো পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান। জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দিয়েছি সেই সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমি একটি সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছি।'

রওশন সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের নামও ঘোষণা করেন। সেখানে আহ্বায়ক করা হয়েছে কাজী ফিরোজ রশীদকে। সহ-আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন গোলাম সরোয়ার মিলন, সদস্য সচিব হলেন সফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জিয়াউল হক মৃধা।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমন্ডলী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির সভাপতি বা আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব ক্রমানুসারে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

'সবাই থাকুক এক ছাতার তলে'

কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, 'দেশের বাজার পরিস্থিতিসহ নানা বিপর্যয় নিয়ে সংসদে যারা আছেন তারা কথা বলেন না, একতারা বাজিয়ে গান গান। এখানে কথা বলতে হবে। আমি মনে করি জাতীয় পার্টির এই কাউন্সিল অতীতের সব কাউন্সিলের চেয়ে সুসংগঠিত হবে। সবাই জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসবে। আমাদের নেত্রী রওশন এরশাদ চান, জাতীয় পার্টির সবাই এক ছাতার নিচে যেন চলে আসে। আর এটার বাস্তবায়ন হবে আসন্ন কাউন্সিলেই।'

রওশন এরশাদের নেতৃত্বে 'পচা মাংসের দলা ফেলে দিয়ে নতুন উদ্যমে জাতীয় পার্টি তৈরি হবে' বলে মন্তব্য করেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

তিনি বলেন, 'আমরা শুনেছি নিজের থেকে দল বড়, দলের থেকে দেশ বড়। আর এবার আমরা কি দেখলাম? দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে নিজে বড়, আর নিজের চাইতে স্ত্রী বড়। এভাবে কোনো দল চলতে পারে না। তাই জাতীয় পার্টির প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা, তার প্রতিফলন এবার আমরা ঘটাতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।'

রওশনের ঘোষিত মহাসচিব মামুনুর রশিদ বলেন, 'আমরা আশা করব আগামী ৯ মার্চের সম্মেলনে দেশের অসংখ্য নেতাকর্মী যোগ দেবেন। পার্টিকে যারা কলুষিত করেছেন, নেতাকর্মীদের মনে আঘাত দিয়েছেন, আমি তাদের বলব, আর পার্টিকে নিয়ে খেলা করবেন না। আপনারা অপরাধবোধ থেকে শর্তহীনভাবে ক্ষমা চান। আজ বাবলা, ফিরোজ ও সেন্টুরা যেহেতু রওশন এরশাদের পাশে আছেন, সুতরাং এবার বিপস্নব হবেই হবে।'

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন ও সাইফুল ইসলাম সেন্টু, অধ্যাপক দেলায়ার হোসেন খান, এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে