সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ জন এমপির মধ্যে ১৯৯ জনই ব্যবসায়ী। মন্ত্রিপরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এমনকি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যেও ব্যবসায়ীরা এখন নীতিনির্ধারক। সে কারণে ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে কোনো কথা এলেই মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিতদের প্রতিবাদ দেখা যায় না। শুক্রবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, সামান্য ডিমে কিছু ব্যবসায়ী ৪ টাকা করে অতিরিক্ত মুনাফা করে প্রতিদিন ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও কারও কোনো বক্তব্য নেই। এভাবেই চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন তেলে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রমজান উপলক্ষে সরকার ৪টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোয় কিছু ব্যবসায়ী বলে উঠলেন তাদের লোকসান হচ্ছে। আর তারা এতদিন মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নিয়ে ফতুর করে দিচ্ছেন, সে বিষয়ে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জমান।
তিনি বলেন, ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্যাবকে জাতির প্রত্যাশা পূরণে আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যে কোনো নাগরিক ভোগান্তি ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন হলেই ভোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের পক্ষে জোরাল কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণদের মধ্যে স্বপ্ন দেখাতে হবে। দেশে ভোক্তাদের মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়াতে না পারলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের বৈষম্য কমানো যাবে না। আর সে কাজে ক্যাবকেই দেশের সর্বত্র জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে। চট্টগ্রাম বিভাগে ক্যাব কর্মকান্ড জোরদার আছে এবং এটিকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সভায় ক্যাবের জেলা পর্যায়ের নেতারা মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাবকে শক্তিশালী করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। কারণ হিসেবে তারা জানান, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারের নানা সুবিধা ও প্রণোদনা পেয়ে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। সেখানে ক্যাব এখনো 'নিজের খেয়ে বনের মোষ আর কতকাল তাড়াবে?'
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও ক্যাব মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি আবিদা আজাদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফয়েজউল্যাহ ও জেলা সহকারী পরিচালক নাসরীন আকতার। সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৭০ জন ক্যাব নেতা অংশগ্রহণ করেন।