যাচ্ছিলেন জানাজায় ফিরলেন লাশ হয়ে

ময়মনসিংহ সড়কে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানসহ ৭ জন নিহত চার জেলায় আরও ৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ময়মনসিংহ বু্যরো
ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের আলালপুর বড়বিলায় বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সিএনজি চালিত অটোরিকশা -যাযাদি
ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের সদর উপজেলার আলালপুর বড়বিলায় বাসের সঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানসহ তিনজন একই পরিবারের সদস্য। তারা এক আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নিতে সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদীয়া গ্রামে যাচ্ছিলেন। নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুর আশাবট গ্রামের করিম মাস্টারের বড় ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বাবলু (৪৫), তার স্ত্রী শীলা আক্তার (৩৫), তাদের শিশুপুত্র মো. সাদমান (৭), ধোবাউড়া উপজেলার উত্তর ডোমঘাটা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৫০) এবং ফুলপুর উপজেলার দিওপূর্বপাড়া গ্রামের সাহাবুদ্দিনের ছেলে অটোরিকশা চালক আলামিন (২৫)। নিহত দুই জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে বাবলু পরিবার নিয়ে বোনের শ্বশুর ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদীয়া গ্রামের মুনসুর আলীর জানাজায় যাচ্ছিলেন। নিহত বাবলুর আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তদন্ত আনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী খোয়ারপাড়গামী আদিল পরিবহণের যাত্রীবাহী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-১৫৭১) শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের সদর উপজেলার আলালপুর বড়বিলায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে ময়মনসিংহগামী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থালেই চালকসহ সাতজন মারা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থল পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর দ্রম্নতগতির বাসটি ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে থেমে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন বাসটি আটক করে। ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে, তবে চালক পালিয়ে গেছে। দুর্ঘটনার পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যান আটকা পড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশের সহায়তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুলপুর থেকে আসা সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি একটি গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে শেরপুরগামী আদিল পরিবহণের একটি বাসের সামনে পড়ে গেলে মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। চার জেলায় আরও ৮ জন নিহত : এদিকে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৪ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বগুড়ায় তিনজন, জামালপুরে দুইজন, মৌলভীবাজারে দুইজন ও ফরিদপুরে একজন নিহত হয়েছেন। বগুড়ার শাজাহানপুরে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও হেলপারসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের বীরগ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নাটোর সদর উপজেলার আল আমিন (৩৯), কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কুদ্দুস মিয়া (৩৭) ও উলিপুর উপজেলার নূর ইসলাম (২২)। এদের মধ্যে আল আমিন ও কুদ্দুস দুই ট্রাকের চালক। আর নুর ইসলাম হেলপার। শাজাহানপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, বালুবাহী একটি ট্রাক নাটোরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় বীরগ্রামে পৌঁছালে নাটোরের দিক থেকে আসা কুড়িগ্রামগামী একটি কয়লাবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ট্রাকের চালক ও এক হেলপার নিহত হন। জামালপুরে ক্রিকেট খেলে বাড়ি ফেরার পথে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বন্ধুর মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর কাচারিপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছে- শাহবাজপুর কাচারিপাড়া এলাকার সোহেল রানার ছেলে মো. কাঁকন মিয়া (১৬), এবং শরিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি ঠিকাদার বাড়ি এলাকার মো. সুমন মিয়ার ছেলে সিনহাদ (১৬)। তারা দু'জনেই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দুই বন্ধু মিলে ক্রিকেট খেলে। খেলা শেষে মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিল তারা। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই কাকনের মৃতু্য হয়। স্থানীয় লোকজন সিনহাদকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, মোটর সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় দু'জনের মৃতু্য হয়েছে। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ময়নাবাজার এলাকায় দুই সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও তিনজন। শুক্রবার বিকালে মহাশস্ত্র গ্রামের ময়নাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- অটোরিকশাচালক রাজু মিয়া (২১) ও যাত্রী নাঈম মিয়া (২৯)। তাদের বাড়ি রাজনগর উপজেলায়। রাজনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুই সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ফরিদপুরের নগরকান্দায় গোল্ডেন লাইন পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রবিউল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবকের মৃতু্য হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। পরে দমকল বাহিনীর একটি দল এসে আগুন নেভায়। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নের মাশাউজান এলাকায় ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একলাছ উদ্দিন শেখ ওরফে সুমন (৩০) নামের আরেক মোটর সাইকেল আরোহী আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত রবিউল ইসলাম ফরিদপুর সদর উপজেলার কেশবনগর গ্রামের কলম শেখের ছেলে। আহত একলাছও একই গ্রামের বাসিন্দা। নগরকান্দা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি শত শত জনতা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে মহাসড়কটি অবরোধ করে রেখেছে। আমরা মরদেহ উদ্ধার করতে গেলে জনতা বাধা দেয়। তাদের দাবি মৃতের স্বজন না আসা পর্যন্ত মরদেহ ধরা যাবে না। মরদেহটি সড়কের মাঝে পড়ে ছিল। পরে জনতাকে বুঝিয়ে এবং হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।