কারাগার থেকে বেরিয়ে ফখরুল
ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে
কারামুক্ত খসরু ও এ্যানি
প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের মুক্তি মেলে।
এসময় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ফুল ছিটিয়ে দুই নেতাকে বরণ করে নেন। পরে পুরো এলাকা স্স্নোগানে স্স্নোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। তখন হুড খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নেতা-কর্মীদের অভিবাদন জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। ইনশালস্নাহ এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবে।'
বিজয় না হওয়া পর্যন্ত 'গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন' অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় জানান মির্জা ফখরুল।
পরে আমীর খসরু বলেন, 'ওরা রাষ্ট্র শক্তিকে কবজা করে ক্ষমতা দখল করেছে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নির্বাচনে নৈতিকভাবে জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে। আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রের আন্দোলন অটুট থাকবে। যতদিন দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে, ততদিন এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।'
জাতীয় নির্বাচনের আগে 'সরকার পতনের' এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরও ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোলস্নার।
সংঘর্ষের মধ্যে পন্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
আর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ২ নভেম্বর রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ হত্যার মামলায় রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি এবং খসরুর বিরুদ্ধে দশটি মামলা হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাটি ছাড়া সব মামলায় তারা বিভিন্ন সময়ে জামিন পেয়ে যান। কিন্তু এক মামলায় আটকে থাকায় তাদের মুক্তি মিলছিল না। সর্বশেষ বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের বিএনপির এ দুই জ্যেষ্ঠ নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। সব মামলায় জামিন হয়ে যাওয়ায় তাদের বৃহস্পতিবার কারামুক্তি দেওয়া হয়।
এদিন কারাগার থেকে ফখরুলকে বাড়ি নিয়ে যেতে আসেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং একান্ত সহকারী ইউনুস আলী। আর খসরুকে নিতে এসেছিলেন তার ছেলে ইস্রাফিল খসরু। সঙ্গে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে তাইফুল ইসলাম টিপু, শামীমুর রহমান শামীম, নিপুণ রায় চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন আজাদ, সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা এ্যানি
এদিকে, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কামিশপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি জামিনে কামিশপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।