শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

একুশে ফেব্রম্নয়ারির কর্মসূচি ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছিল সব কর্মকান্ড

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
একুশে ফেব্রম্নয়ারির কর্মসূচি ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছিল সব কর্মকান্ড

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১১ ও ১৩ ফেব্রম্নয়ারি পতাকা দিবস পালনের পর থেকে একুশে ফেব্রম্নয়ারির সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছিল সব কর্মকান্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ রাজনৈতিক নেতারা একুশে ফেব্রম্নয়ারির কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এদিকে, শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় অনশনের মাধ্যমে দেহত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় পাকিস্তান সরকার তাকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।

ছাত্র-জনতাকে একুশে ফেব্রম্নয়ারির কর্মসূচি বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করতে প্রদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছড়িয়ে পড়েছিলেন। তারা এ সময় ঢাকায় ফিরে আসতে শুরু করেন।

মূলত ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধাস্ত গৃহীত হওয়ার পর থেকেই বাংলায় শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। তার দাবি অগ্রাহ্য হয়। ফলে ২৬ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠিত হয়েছিল এবং ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় এবং বাংলা ভাষা দাবি দিবস ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্রলীগ এই কর্মসূচি পালনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে।

সেই সময় শেখ মুজিব, শামসুল হক, অলি আহাদসহ ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করলে ঢাকায় ১৩-১৫ মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে

পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৫ মার্চ ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো ছিল- ১. ভাষার প্রশ্নে গ্রেপ্তার করা সবাইকে মুক্তি প্রদান করা হবে। ২. পুলিশি অত্যাচারের বিষয়ে তদন্ত করে একটি বিবৃতি প্রদান করা হবে। ৩. বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। ৪. সংবাদপত্রের ওপর হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। ৫. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ৬. ২৯ ফেব্রম্নয়ারি হতে জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করতে হবে। ৭. পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ওঠে যাওয়ার পর বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রবর্তন করা হবে। ৮. রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন 'রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় নাই' এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দিবেন।

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন ২১ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা দেন 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা'। এরপর ২৪ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘোষণা দিলে ছাত্ররা তার উক্তির চরম প্রতিবাদ জানান। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এর ব্যতিক্রম হয়নি।

সূত্র : আবদুল হক, ভাষা-আন্দোলনের আদি পর্ব, ঢাকা, ১৯৭৬; বদরুদ্দীন উমর, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, ১ম খন্ড, ঢাকা, ১৯৭৯।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে