ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি-বাণিজ্য) উত্তম কুমার রায় বলেছেন, আগামী জুন মাস থেকে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ আয়োজিত নাগরিক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান তিনি। 'শ্রেণিভিত্তিক পানির মূল্য ও সুপেয় পানির অঙ্গীকারের বাস্তবতা- আমাদের মতামত' শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব (অব.) মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত নিরাপদ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য পানির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি।
ওয়াসার প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসা প্রথমে শীতলক্ষ্যা ও পরে মেঘনা নদী থেকে পানি সরবরাহের প্রকল্প গ্রহণ করে। অথচ ঢাকার মধ্যে থাকা বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর পানি কীভাবে ব্যবহার করা যায় তার পরিকল্পনা করেনি। তাদেরকে বললে তারা জানায় যে এই দুই নদীর পানি এরই মধ্যে দূষিত হয়ে গেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো আগামীদিনে পদ্মা, শীতলক্ষ্যা এবং
মেঘনা নদীর পানি যে দূষিত হবে না তার নিশ্চয়তা কী? পানি অমূল্য সম্পদ। তাই পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মহাপরিকল্পনা নেওয়া দরকার।
এ সময় ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, শ্রেণিভিত্তিক না করে উচ্চ শ্রেণির জন্য করের হার বাড়ানো যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (বাণিজ্য) উত্তম কুমার রায় বলেন, পানির মূল্য নির্ধারণের জন্য শ্রেণিভিত্তিক যে পরিকল্পনা- সে বিষয়ে বিদেশি এক প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র সমীক্ষা করেছে। এ ব্যাপারে আমরা নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং সরকারের বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ও সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পানির দাম বাড়ানোর কথা যেভাবে গণমাধ্যমে আসছে যে জুন মাস থেকে দাম বাড়ছে- তা সঠিক নয়। কারণ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত শুধু আমাদের একার নয়, সরকারের
সিদ্ধান্ত সবার আগে। তাই এ বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পানির উৎপাদন খরচ বেশি বলে যে সমালোচনা করা হচ্ছে, মনে রাখতে হবে গত কয়েক বছর ধরে বিদু্যতের দাম বাড়লেও আমরা কিন্তু সেভাবে পানির দাম বাড়াইনি। ঢাকা ওয়াসা সবার জন্য সহনীয় এবং সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য পানির দাম আরও কমিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একটি গণশুনানির ভিত্তিতে পানির মূল্য নির্ধারণ করা হোক। কারণ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি কেন হচ্ছে আর প্রকল্পের নামে যে অনিয়ম আছে বলা হয়- তার জন্য গণশুনানি করে সঠিক সিদ্ধান্ত ওয়াসাকে নিতে হবে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহা. ইফতেখার বলেন, পানির মূল্যের চেয়ে সুপেয় পানি এবং আগামী প্রজন্মসহ সব নাগরিকের পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম আরও বলেন, যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তা আগামীদিনের কথা চিন্তা করেই নেওয়া হয়েছে। আমাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা অভিযোগ থাকলে আমাদেরকে জানান, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো দুর্বলতা রয়েছে। আমরা দ্রম্নত সব সমস্যার সমাধান করব ইনশাআলস্নাহ।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সাহেদা বেগম, অ্যাডভোকেট বিলস্নাল হোসেন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদু্যতের মতো ব্যবহারের ওপর পানির মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ করলে অনেক নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষও উচ্চমূল্যের পানির আওতায় পড়ে যেতে পারে। এতে করে সুবিধার বদলে অসুবিধাই বেশি হবে। তাই শ্রেণিভিত্তিক নয়, ব্যবহারভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ করা হোক।