পাকিস্তানে ইমরান বিরোধীদের সমঝোতা

শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী জারদারি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাকিস্তানের ভোটের ফলাফল ও এরপর নানা জটিল সমীকরণ মিলিয়ে অবশেষে জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-পিএমএল-এন ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি। পিএমএল-এন বলছে, দলীয় প্রধান নওয়াজ শরিফ নয়, এই সরকারের প্রধান হিসেবে থাকবেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ। অন্যদিকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন পিপলস পার্টির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি। একই সঙ্গে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হবেন নওয়াজ কন্যা মরিয়ম নওয়াজ। পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফলের পর সরকার গঠনে তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ছোট ছোট আরও কয়েকটি দল। ইমরান বিরোধী দুই দল ভোটে খুব বেশি সুবিধা করতে না পারলেও তারা নিজেদের স্বার্থে সরকার গঠনে এক হয়েছেন ভোটের পর। ফলাফলের পর নানা নাটকীয়তার পর মঙ্গলবার গভীর রাতে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে দল দু'টি। সরকার গঠনে পুরোপুরি সহযোগিতা করলেও সরকারের কোনো মন্ত্রিত্ব পদে থাকতে রাজি নন পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো। ভোটের ফলাফলের পর তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি বলেছে, তাদের এই চুক্তি নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এনকে সরকার গঠনে সহযোগিতা করবে। তবে তারা কোনো মন্ত্রিত্বপদ নেবে না। মঙ্গলবার রাতে ইসলামাবাদে দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি নতুন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। এ সময় শাহবাজ শরিফও একই কথা বলেন। এই দলগুলোই দুই বছর আগে ২০২২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করেছিল। আর বুধবার পিএমএলকিউ'র চেয়ারম্যান চৌধুরী সুজাত হাসানের বাসভবনে ছয় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, ছয়টি রাজনৈতিক দল জোট সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে এবং পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন আসিফ আলি জারাদারি। পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিতা আসিফ আলি জারদারি এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। এর আগে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। নির্বাচনী ফলাফল এই নির্বাচনের ফলাফলে ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ২৬৬টি আসনের মধ্যে ৯৩টি আসনে জয় পেয়েছিল। যেহেতু তারা স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হয়েছিল সে কারণে কোনো দলের সহযোগিতা ছাড়া সরকার গঠন করাও সম্ভব ছিল না তাদের পক্ষে। পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১৩৪টি আসন। অন্য দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন ৭৫টি আসনে জয়লাভ করেছে এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে। এছাড়াও দলগুলোকে মহিলা ও অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ৭০টি আসন থেকে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে। এসব অতিরিক্ত আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নেই। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন এর কর্মকর্তা মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, দলের নেতা নওয়াজ শরিফ তার ভাই শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনীত করার পরিকল্পনা করেছেন। তারা দু'জনই এর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন তার দল শুধুমাত্র মুসলিম লীগকে সরকার গঠনে সহযোগিতা করবে তবে সরকারের মন্ত্রিসভার কোনো পদ তারা নেবে না। তবে ইমরান খান ও তার দল পিটিআই জোর দিয়ে বলছে, তারা এখনো বিশ্বাস করে যে এই নির্বাচনে তাদের বিরুদ্ধে কারচুপি হয়েছে। সে কারণে ভোটের এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করার কথা বলছে পিটিআই। তাই একে চুরির ভোট হিসেবে আখ্যা দিয়ে আবারও সতর্ক করেছেন ইমরান খান। 'দিন-দুপুরে এই ধরনের ডাকাতি শুধুমাত্র জনগণের জন্যই অসম্মানের না, বরং দেশের অর্থনীতিকে আরও নিম্নমুখী করবে', বলেছিলেন ইমরান খান। তবে পিটিআইয়ের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন।