সরকারবিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী

বিপস্নব করতে করতে এরা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যারা সরকারের পায়ের নিচে মাটি খোঁজে, তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না, সেটি সন্দেহ। শুনি যে সরকার নাকি উৎখাত করে ফেলবে। আমাদের পায়ের নিচে নাকি মাটিই নেই। এরা লম্বা লম্বা কথা বলে শুধু বিপস্নব করবে। বিপস্নব করতে করতে এরা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে।' বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া নাশকতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস এসবের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সাক্ষ্য দিতে হবে, যাতে তাদের সাজা হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ এরা দেশের শত্রম্ন, জাতির শত্রম্ন, এরা আমাদের স্বাধীনতার শত্রম্ন, এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রম্ন।' ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে 'অবাধ ও সুষ্ঠু' নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, 'প্রথমে তারা নির্বাচন ঠেকাবে, নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তাদের প্রভুরা আছে, তাদেরও চেষ্টা ছিল, কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণই আমাদের শক্তি। আর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা সরকারে এসেছি।' দেশের উন্নতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মনে রাখতে হবে, কেউ যেন মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস দুর্নীতি এবং কোনো রকম অপকর্ম যেন করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা চাই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক।' বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'বিএনপির একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের সন্ত্রাসের শিকার আমাদের নেতা-কর্মীরা। আমরা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে তাদের অপকর্মের জবাব দিই।' তিনি আরও বলেন 'কেউ জায়গা করে দেয় না, করে নিতে হয়'। নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা চলছে। মেয়েদের যেখানে দিই, তারা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে। একটা সময় ছিল মা বাবা মেয়েদের বেশি পড়াতে চাইত না। এখন মেয়েরা সবক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখাচ্ছে। নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে। মেয়েদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস, শিক্ষা-দীক্ষায় মেয়েরা উন্নত হবে।' দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৪৮টি আসনের জন্য ১ হাজার ৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে 'নারী জাগরণ' হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'অনেকে জানেন পাবেন না, তারপরও কেনা মানে যোগ্যতার জানান দেওয়া। সবাই-ই যোগ্য। তবে কঠিন একটা কাজ আমাদের ওপর পড়ল। এখনও যদি কেউ পেছনে পড়ে থাকে, তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব আজকের এই নেতৃত্বের।' নারী নেতৃত্বের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, 'সংগঠন করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের আস্থা অর্জন করবে হবে। কেউ জায়গা করে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়।' তৃণমূলে গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের নিজেকের আরও তৈরি করতে হবে।' পরে প্রতিটি বিভাগে থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, 'এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থেকে মনোনয়ন বাছাই করা, এটা একটা কঠিন কাজ। প্রত্যেকটি বিভাগ থেকেই নিতে হবে। বহু নারী নেতৃত্বে গড়ে তুলে তাদের সংসদে নিয়ে এসেছি। সংগঠনটা করতে হবে। নির্বাচনে কেউ মনোনয়ন পাবে কেউ পাবে না, এজন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। এবার না হলে আগামীতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।' শেখ হাসিনা পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর 'জুলুম-হামলার' কথাও এ সময় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'কতজনের বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর কি নিদারুণ কষ্টে তাদের জীবন পার করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমাকে সেসব খবরও নিতে হয়। বহু পরিবারের মেয়েদের আমি তুলে এনেছি। তারা হারিয়ে যাচ্ছিল রাজনীতি থেকে।' গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করায় জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'একটা রাষ্ট্র চালাতে অনেক মেধাবী মানুষের দরকার হয়।' শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজনে 'জীবন দিতে' তিনি প্রস্তুত। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি 'উজ্জ্বল' হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আজ জার্মানি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী এদিকে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দি?তে আজ জার্মা?নি সফ?রে যা?চ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হা?সিনা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচ?নে সরকার গঠনের পর এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূ?ত্রে এ তথ্য জানা গে?ছে?। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, বৃহস্প?তিবার ঢাকা থেকে মিউনিখের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে সরকারপ্রধানের। দুই দিন দেশটি সফরে থাকবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ১৮ ফেব্রম্নয়ারি দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার। ঢাকার এক কূটনী?তিক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রম্নয়ারি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিতব্য মিউনিখ সিকিউরিটি সম্মেলনের ৬০তম আসরে অংশ নেবেন। আসন্ন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইসু্যতে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধর?বেন। তি?নি জলবায়ু পরিবর্তন ইসু্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন। এ কূটনী?তিক ব?লেন, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে মিউনিখ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে এটি হবে তার তৃতীয় অংশগ্রহণ। আর নতুন সরকা?র গঠনের পর এ?টি হ?বে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বি?দেশ সফর। মন্ত্রণালয় সূত্র বল?ছে, মিউ?নি?খ স?ম্মেল?নে যোগ দেওয়ার পাশাপা?শি সরকারপ্রধান বেশ কয়েকজন সরকারপ্রধানসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এর মধ্যে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন ও নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হা?সিনা। এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মেটা গেস্নাবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ প্রধানমন্ত্রীর স?ঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর?বেন। গত বৃহস্প?তিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, আয়োজক সংস্থার সভাপতি রাষ্ট্রদূত ড. ক্রিস্টোফার হিউগেনের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন বলে সদয় সম্মতি প্রদান করেছেন। মিউনিখ সিকিউরিটি সম্মেলন মূলত সমকালীন ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চপর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার জন্য বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতারা, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে থাকেন।