ক্ষমতা নয়, দায়িত্বই আমাদের গ্রহণ করতে হবে : সিইসি
প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, 'আমরা সবসময় বলেছি, নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও বলেছিলাম, বিএনপির জন্য সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।'
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আরএফইডির নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ ও বিদায়ী কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, 'ক্ষমতা নয় দায়িত্বই আমাদের গ্রহণ করতে হয়। ক্ষমতা শব্দটিকে যদি আমরা পরিহার করতে পারি তাহলে দেশ ও সমাজ অনেক বেশি এগিয়ে
\হযেতে পারে। গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে লম্বা বক্তৃতা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলো কাজ করে না, তখন সবগুলো কাজ গণমাধ্যম একাই করে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখে।'
তিনি বলেন, 'গণমাধ্যমকে আমরা পছন্দ করি না বা ঘৃণা করি। যখন আমার প্রশংসা করা হয় তখন ভালো লাগে। তবে সমালোচনার জায়গায় ছাড় দেওয়া যাবে না। এই সাহসী ভূমিকা গণমাধ্যমকেই পালন করতে হবে। এটাই গণমাধ্যমের ভূমিকা। দেশের গণমাধ্যমের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল। অনেক পেপার-পত্রিকা পড়ি, চ্যানেলগুলো দেখি-আমাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা যে খুব নেতিবাচক তা বলা যাবে না। আমি তখনই ক্ষুব্ধ হয়ে যাই, যখন আমার বিরুদ্ধে কিছু থাকে; এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, যে আমার বিরুদ্ধে বা সরকারের বিরুদ্ধে থাকলেও গণমাধ্যম সাহসী ভূমিকা পালন করবে।'
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'নির্বাচনটা ভালো হয়েছে কী খারাপ হয়েছে সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। সামনে আরও অনেকগুলো নির্বাচন আছে, উপ-নির্বাচন আছে, সেগুলোকেও খাটো দেখার অবকাশ নেই। তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব গড়ে তোলার যে দায়িত্ব, সেখানে নেতৃত্ব যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে জাতীয় পর্যায়েও নেতৃত্ব শক্তিশালী হবে না। তৃণমূলের সংস্থাগুলোয় নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে। সেখানেও গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। সেখানে গণতন্ত্র কতটা কাজ করছে, কতটা কাজ করছে না, এগুলো তুলে আনতে হবে।'
তিনি বলেন, 'বস্তুনিষ্ঠতা, এটা খুবই কাম্য। আরেকটা হচ্ছে অতিরঞ্জিত, এটাকে আমি মন্দভাবে দেখি না। অতিরঞ্জনের মধ্যে সাহিত্যের উপাদান থাকে, কিন্তু বিকৃত হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। মিস ইনফরমেশন, অতিরঞ্জন হতে পারে। কিন্তু বিকৃত হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। জনগণকে সচেতন করতে কমিশন কতটা দায়িত্ব পালন করেছে। সরকার কতটা সহায়তা করছে কী করছে না, এগুলো প্রচার হলে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।'
সিইসি বলেন, 'নির্বাচনকে যাতে আরও স্বচ্ছ, উন্নত করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। ভারতে তিন মাস ধরে নির্বাচন হয়। আমাদের এখানে যদি তিনটা পর্বে সেটা করা যায় তাহলে আরও সহজ ও সুষ্ঠু হবে। একই জেলার মধ্যে হওয়ার কারণে প্রশাসনের জন্য এটা সহজ হয়ে যাবে। ভোটার আসছে কিনা, সহিংসতার সম্ভাবনা আছে কিনা, এমন বিষয় পর্যালোচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। উপজেলায় এটা প্রয়োগ হচ্ছে। এটার বেশ কিছু ইতিবাচক দিক আমরা দেখতে পাচ্ছি।'
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, 'দলীয় প্রতীক না থাকলে এটারও ভালো দিক আছে। এটা তো জাতির জন্য নয়, এলাকার জন্য। স্থানীয় সরকার ছোট একটা এলাকায় পরিচালিত হয়, সীমিত ক্ষমতা নিয়ে। দলীয় প্রতীক হোক কিংবা না হোক আমরা চাই সুন্দর নির্বাচন।'
তিনি বলেন, 'বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য ফোনে কথা বলেছি, ডিও লেটার দিয়ে আহ্বান জানিয়েছি। তারা আহ্বানে সাড়া দেয়নি। আমরা নির্দ্বিধায় বলেছি, তারা যদি নির্বাচনে অংশ নিতেন তাহলে সেটি অনেক বেশি অংগ্রহণমূলক হতো, ভোটার উপস্থিতিও বেশি হতো। নির্বাচনটা সর্বজনীন হোক। বড় বড় দল অংশ না নিলে নির্বাচন অবৈধ হবে না। তবে নির্বাচনের ন্যায্যতা, গ্রহণযোগ্যতা খর্ব হবে। আমরা যদি সঠিক সমন্বয় ঘটাতে পারি নির্বাচন আরও সুন্দর হবে।'
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে তিনি বলেন, 'অনেক সময় এটা আদায় করে নিতে হয়। স্বাধীনতা সব সময় থাকবে না। তবে স্বাধীনভাবে কাজ করলেও সব সময় চাপ আসবে তা নয়। গণমাধ্যমের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নত বিশ্বে শাসকদের ঠিক জায়গায় রাখতে গণমাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। গঠনমূলক সামালোচনা করার কথাও বলেন।'