বিষয়টা অনুমিতই ছিল। সাকিব আল হাসান ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেই বলেছিলেন নেতৃত্বে আর থাকবেন না। তবে সাকিব সব ফরম্যাটের নেতৃত্ব ছাড়বেন, নাকি কেবল ওয়ানডেতে সেটাই ছিল দেখার। অবশেষে জানা গেল, তিন ফরম্যাটেই দায়িত্ব ছেড়েছেন সাকিব। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) গতকাল জাতীয় ক্রিকেট দলের তিন ফরম্যাটের নতুন অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সোমবার বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে এ কথা জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
এদিকে নির্বাচক কমিটিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিসিবির সাবেক পরিচালক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে। নির্বাচক প্যানেল থেকে হাবিবুল বাশার সুমনকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে নেওয়া হয়েছে হান্নান সরকারকে। প্যানেলে রাখা হয়েছে আব্দুর রাজ্জাককে।
সাকিব আল হাসানের চোটে বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম ও অ্যাওয়ে দুই সিরিজেও অধিনায়ক ছিলেন এই তরুণ। চৌকশ নেতৃত্বে নজরও কাড়েন সবার। তখন থেকেই গুঞ্জন তিনিই হতে যাচ্ছেন স্থায়ী অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত তিন সংস্করণেই তাকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ঘোষণা করেছে বিসিবি।
বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন,
'অধিনায়ক নির্বাচনে সময় বেশি লেগেছে। বোর্ডে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা শান্তকে, নাজমুল হোসেন শান্তকে এই বছরের জন্য অধিনায়ক নির্বাচন করেছি।'
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সাকিব একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়ে যান, বিশ্বকাপ শেষে আর একদিনও নেতৃত্ব দিতে চান না তিনি। গুঞ্জন রয়েছে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী নন। লম্বা সংস্করণের ক্রিকেট থেকে প্রায় সময়ই বিশ্রামে থাকেন তিনি। তাই এ দুই সংস্করণ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন সংস্করণেই নতুন অধিনায়ক খুঁজে নিল ক্রিকেট বোর্ড।
শান্তকে তিন ফরম্যাটের নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে পাপন বলেন, 'সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে আমাদের জানিয়েছে তার চোখে সমস্যাটা এখনো ভালোভাবে সেরে ওঠেনি। আর সামনে শ্রীলংকা সিরিজ আছে, আরও খেলা আছে। তাই আমরা শান্তকে এই বছরের জন্য সব ফরম্যাটের অধিনায়ক করেছে।'
চলমান বিপিএলে চোখের সমস্যার কারণে প্রথমে ব্যাট হাতে রান পাননি। যার কারণে দু'বার করে বিদেশে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। এছাড়াও মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
সব মিলিয়ে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করাটা সাকিবের জন্য অনেকটায় চাপের। তাই সব কিছু বিবেচনা করে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাকিব। তা ছাড়া অধিনায়ক হিসেবে বিসিবির প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি। এমন মন্তব্য করেন নাজমুল হাসান পাপন।
লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক হিসেবে কাজ করে আসছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন ও আব্দুর রাজ্জাক। যেখানে প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন নান্নু। সোমবারের বোর্ড মিটিংয়ে নান্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিসিবির সাবেক পরিচালক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে।
গত ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হয় মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর প্যানেলের। এরপরে বিশেষ অনুমোদনে বাড়ানো হয় তার মেয়াদ। ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করছেন নান্নু। এর আগে বিসিবির নির্বাচক প্যানেলের সদস্য ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পরই মূলত নতুন করে নান্নুর সঙ্গে চুক্তি নবায়নের ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে উঠে বোর্ড। শেষমেশ বিসিবির বোর্ড মিটিংয়েই টানা ৮ বছরের পালন করা দায়িত্বের যবনিকা টানতে হলো সাবেক এই ক্রিকেটারকে।
নির্বাচক প্যানেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া লিপু এর আগেও বোর্ডে ছিলেন। বিসিবির সাবেক এই পরিচালক ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে জাতীয় দলের টিম ম্যানেজার ছিলেন। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানসহ বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবার প্রধান নির্বাচক হলেন। এছাড়া যুব দলে লম্বা সময় ধরে কাজ করা হান্নান সরকার প্রমোশন পেয়েছেন। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর সঙ্গে হান্নান সরকারও এসেছেন নির্বাচক প্যানেলে। এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে আমাদের জাতীয় নির্বাচক কে হবেন, প্রধান নির্বাচক। এটা নিয়েই সময় বেশি লেগেছে। অনেক কিছু বিবেচনা করে আমরা গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে আমরা নির্বাচিত করেছি। এখানে আরও দু'জন আছে। একজন আমাদের খান আব্দুর রাজ্জাক। আরেকজন হান্নান সরকার।'