কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন
ব্যাংক পরিচালকের নূ্যনতম বয়স হবে ৩০ বছর
এক পরিবার থেকে তিনের বেশি পরিচালক নয় পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০
প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
এখন থেকে ৩০ বছরের কম বয়সে ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে না। পারিবারিক কর্তৃত্ব কমাতে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক হতে পারবে না। শেয়ারহোল্ডার ও স্বতন্ত্রসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হবে সর্বোচ্চ ২০ জন। তবে পরিচালক নিযুক্তি বা পুনঃনিযুক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানোমদন গ্রহণ করতে হবে।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন বিষয়ে নীতিমালার বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। একইসঙ্গে পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কেও নীতিমালায় বিস্তারিত উলেস্নখ রয়েছে।
একই সঙ্গে প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন ও এসব কমিটির দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। পরিচালক পদে নিযুক্তি ও অপসারণ বিষয়েও শর্তাদি উলেস্নখ করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিচালকদের সম্মানী ও আর্থিক সুবিধাদিও স্পষ্ট উলেস্নখ রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০ জন এবং সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক সংখ্যা হবে তিনজন। তবে ২০ এর নিচে পরিচালক হলে স্বতন্ত্র পরিচালক দুইজনের বেশি হতে পারবেন না। একইসঙ্গে কোনো একক পরিবার হতে তিনজনের বেশি সদস্য পরিচালক হতে পারবে না।
আর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নূ্যনতম বয়স ৩০ বছর বয়স হতে হবে। আর ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে,
ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম যথাযথ ও সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তির সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হওয়া আবশ্যক। ব্যাংকের কর্মকান্ড প্রধানত আমানতকারীদের অর্থে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা করা অপরিহার্য। এ কারণে ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব অপরাপর কোম্পানির তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালে ব্যাংক-কোম্পানি আইনে বেশি সংশোধনী আনা হয়েছে।
আর এ সংশোধনের ফলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের গঠন এবং পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, যোগ্যতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নতুনভাবে নীতিমালা প্রণয়নের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক খাতে সুশাসনের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদের গঠন, পরিচালকের দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ তদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে এ নীতিমালা অনুসরণের জন্য নির্দেশনা জারি করে।
পর্ষদ গঠনের বিষয়ে বলা হয়, ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারধারক পরিচালক, শেয়ারধারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক এবং স্বতন্ত্র পরিচালক এর সমন্বয়ে গঠিত হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিকল্প পরিচালকও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হবেন; পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০ জন; পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সংখ্যা ২০ জন হলে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা হবে অনূ্যতম ৩ জন। পর্ষদের পরিচালক সংখ্যা ২০ জনের কম হলে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা হবে অনূ্যন ২ জন; কোনো একক পরিবার হতে ৩ জনের অধিক সদস্য একই সময়ে কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা : সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনূ্যতম ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে; কোনো ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো কাজের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হবে না; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নূ্যনতম বয়স ৩০ বছর হতে হবে; তিনি ফৌজদারি অপরাধে দন্ডিত হননি কিংবা কোনো জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্যবিধ অপরাধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বা জড়িত নন; দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে কোনো বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য নেই; নিজের কিংবা স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের জন্য খেলাপি নন; ব্যক্তিগতভাবে অথবা তার ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কর খেলাপি নন; সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানিতে কোনো পদে চাকরিরত থাকলে চাকরি অবসায়নের ৫ বছর অতিক্রম না হলে তিনি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে পারবেন।
পরিচালক নিযুক্তি ও অপসারণ :পরিচালক নিযুক্তি বা পুনঃনিযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানোমদন গ্রহণ করতে হবে। বার্ষিক সাধারণ সভা বা পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সাত কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে পরিচালকের সব তথ্য দিতে হবে।
পরিচালক পদ শূণ্য হলে নীতিমালা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষে গ্রহণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত বিধান নীতিমালার ৮ অনুচ্ছেদে রয়েছে। নীতিমালার ৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো পরিচালককে অপসারণ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানোমদন গ্রহণ করতে হবে।
নির্বাহি কমিটি :সর্বোচ্চ ৭ জন পরিচালককে নিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠন করতে হবে। একজন তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান বা সভাপতি নির্বাচিত হবে। কমিটির সদস্য প্রতি তিন বছরের জন্য মনোনীত হতে পারবেন। নির্বাহী কমিটিতে এক পরিবারের একজনের বেশি অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। কোম্পানি সচিব নির্বাহী কমিটির সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অডিট কমিটি :সর্বোচ্চ পাঁচ জনকে নিয়ে অডিট কমিটি গঠন করতে হবে, এরমধ্যে দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। স্বতন্ত্র পরিচালকদের একজন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বা সভাপতি হবেন।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি :পাঁচ জন পরিচালক নিয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে। সদস্যদের মধ্যে একজন তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান বা সভাপতি হবেন। কমিটি ব্যাংকের বিভিন্ন কাজের ঝুঁকি নির্ধারণ এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ কৌশল প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
পরিচালকদের সম্মানী ও আর্থিক সুবিধাদি : একজন পরিচালক পর্ষদ বা সহায়ক কোনো কমিটির সভায় উপস্থিত হলে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া যাবে। তবে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ পর্ষদ সভা দুটি, নির্বাহী কমিটির চারটি, অডিট কমিটির একটি এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানি পাবেন। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক প্রতিমাসে স্থায়ী সম্মানি বাবদ ৫০ হাজার টাকা প্রাপ্য হবেন।