কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শীলখালী ও বলিবাজার এলাকার বাসিন্দাদের সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব এলাকার শত শত রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসছেন। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, রোববার ভোর এবং সকালে ঘুমধুম ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ও দমদমিয়া পয়েন্টের ওপারে ফের গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা গেছে। অন্যদিকে, উখিয়া উপজেলার বালুখালীর তেলিপাড়া খালে মাথায় হেলমেট ও হাতে গস্নাভস পরা একটি লাশ ভেসে এসেছে। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ির-তুমব্রম্ন সীমান্তে বিজিবির উদ্ধার করা অবিস্ফোরিত দুটি মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করেছে সেনাবাহিনীর বোমা বিস্ফোরকের একটি বিশেষজ্ঞ দল।
টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন নাফ নদীতে দেখা যায়, লম্ববিল, উনছিপ্রাংকানজড় পাড়া এলাকাসহ নাফ নদীতে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। যেখানে ছোট শিশু ও বয়স্ক মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি বাঁশি দিলে তারা মিয়ানমারের সীমান্তে চলে যান। তারা মিয়ানমারের কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকার
বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র মতে, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা নাগরিক বোঝাই ৪-৬টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময় টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। শুনেছি বলিবাজার থেকে কিছু রোহিঙ্গা নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে সুযোগ বুঝে অনুপ্রবেশ করার জন্য। এর আগেও ২৩ জন রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আমি তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সজাগ আছি, কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৯ ফেব্রম্নয়ারি হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায় নাফ নদীর শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে আসা সন্দেহজনক দুই নারী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিজবির সদস্যরা ওই দুই নারীকে দেখতে পেয়ে থামার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, ওই দুই নারী নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক পরিচয় দেন। পরে তাদের পুশব্যাক করা হয়। আমরা সব সময়ই সজাগ আছি।
গোলাগুলির শব্দে কাঁপছে এপার
এদিকে ফের ঘুমধুম ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দে এপার কেঁপেছে। রোববার ভোর ও সকালে ঘুমধুম ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ও দমদমিয়া পয়েন্টের ওপারে ফের গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা গেছে।
ঘুমঘুমের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, গত শনিবার মিয়ানমারের ওপার থেকে অবিস্ফোরিত একটি মর্টার শেল এপারে তুমব্রম্ন এসে পড়েছে। এরপর রাতে তুমব্রম্ন হিন্দি পাড়ার ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির ফায়ারের শব্দ এপারে ভেসে আসল। এর আগে গত দুই সপ্তাহ জুড়ে ওপারে চলা সংঘাত থেকে এপারে গোলা পড়া ও হতাহতের ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদে সরে গিয়েছিল। পরে কিছুটা পরিবেশ শান্ত দেখা দিলে আবারো মর্টার শেল পড়লে বা গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে নতুন করে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা গেছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, রোববার সকাল হতে হোয়াইক্যং সীমান্ত পয়েন্টের মিয়ানমারের ওপারে তোতার দ্বীপ এলাকায় এক ঘণ্টার মতো গোলাগুলির হয়েছে। সেখানকার ফায়ারের শব্দে এপারে শোনা গেছে।
মাথায় হেলমেট পরা লাশ নাফ নদীতে
এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীর তেলিপাড়া খালে মাথায় হেলমেট ও হাতে গস্নাভস পরা একটি লাশ ভেসে এসেছে রোববার। এদিন দুপুর দেড়টায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, লাশটি মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী কিংবা বিদ্রোহী কোনো গোষ্ঠীর সদস্যের হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, নাফ নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকা তেলিপাড়া খালের জোয়ারের পানিতে লাশ ভেসে আসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তারা পুলিশের জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) খবর দেন। সেখান থেকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল নিষ্ক্রিয়
এদিকে আমাদের নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির-তুমব্রম্ন সীমান্তে বিজিবির উদ্ধার করা অবিস্ফোরিত দুটি মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করেছে সেনাবাহিনীর বোমা বিস্ফোরকের একটি বিশেষজ্ঞ দল। রোববার বিকাল ৪টার সময়ে তুমব্রম্ন সড়কের ব্রিজ ও সড়কের পাশে এই দুটি মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করা হয়।