আজকের যায়যায়দিন

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ভুটানের নাগরিক কার্মাডেমার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তার মতে, সফলভাবে চিকিৎসা নিয়ে রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছেন। রোগী এখন সুস্থ অবস্থায় ভুটান চলে যেতে পারবেন। অথচ এই রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয়, ভারতসহ অনেক দেশ এমনটাই বলেছিল, জানান তিনি।

শনিবার রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভুটান থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী কার্মাডেমার সফল অপারেশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

তিনি বলেন, 'বিদেশে আমাদের দেশের মানুষ নিয়মিতই চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। অনেক টাকা খরচ করে কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। অথচ ভুটান থেকে চিকিৎসা নিতে কার্মাডেমা নামের যে রোগী এসেছিলেন তিনি এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। তার এই চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে ভারতসহ অনেক দেশ তাকে বলে দিয়েছিল। অথচ আমরা বাংলাদেশি ডাক্তাররা তার চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হলাম। রোগী সুস্থ অবস্থায় এখন ভুটান চলে যেতে পারবেন।' ভুটানের ২৩ বছর বয়সি কার্মাডেমার চিকিৎসার জটিলতা সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই রোগীর চিকিৎসা করা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও জটিল কাজ। এর আগে ভারতে ও ভুটানে তার অপারেশন হয়েছিল, থাইল্যান্ডেও তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। কিন্তু এর আগে তার অপারেশনগুলো সাকসেসফুল

না হওয়ায় পরবর্তী অপারেশন করাটা ছিল ভীষণ জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ কারণে অনেক দেশই তার জন্য নতুন করে আরেকটি অপারেশন করার সাহস করতে পারেনি। আমরা এটিকে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন ধরে নিয়ে চিকিৎসা বোর্ড করে এই অপারেশন কাজে হাত নেই।'

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা

মন্ত্রী বলেন, 'দীর্ঘসময় নিয়ে শরীরের অন্য জায়গা থেকে রক্তসহ মাংস, হার কেটে নাকে লাগিয়ে দেওয়া এবং নাকের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখাটা ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ। সেই কঠিন কাজটি আমাদের দেশের চিকিৎসকরা সফলতার সঙ্গে করে দেখিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবার জন্য বিরাট এক অর্জন। এখন এরকম সফলতার পর ভুটানেও ১৫ শয্যার বার্ন ইনস্টিটিউট করার ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। নেপালসহ অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশগুলোতেও এরকম জটিল চিকিৎসাসেবা আমাদের চিকিৎসকদের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়াসহ বিদেশি রোগীদের দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে।'

বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান বিশ্বের কোনো দেশের তুলনায় কম নয়, উলেস্নখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'শুধু সুযোগের অভাবে চিকিৎসকরা সেটি তুলে ধরতে পারেন না। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো সুযোগ দেওয়া গেলে এই চিকিৎসকরাই তাদের যোগ্যতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারবেন। নাকে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ভুটানের ২৩ বছর বয়সি মেয়ে কার্মাডেমা'র সফল চিকিৎসায় বাংলাদেশি চিকিৎসকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, বিদেশ থেকেও খুব শিগগিরই দলে দলে মানুষ বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবে এবং বিদেশিদের উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সেই সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে।'

সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের রাষ্ট্রদূত মি. রিং চেং কুইং সিল বলেন, 'এই জটিল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ দেখিয়েছে- যা বিশ্বের অন্য দেশ পারেনি বাংলাদেশ সহজেই সেটি করতে পেরেছে। অন্য দেশগুলো যখন বলেছিল এই অপারেশন সম্ভব নয়, তখন বাংলাদেশ বলেছিল সেটি সম্ভব এবং বাংলাদেশ সেই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ।'

চিকিৎসা নিতে আসা কার্মাডেমা বলেন, 'যখন আমি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, তখন বাংলাদেশের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়ে সফল চিকিৎসা দিয়েছেন। এজন্য আমি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।'

উলেস্নখ্য, ভুটানের ২৩ বছর বয়সি মেয়ে কার্মাডেমা প্রথম কোনো বিদেশি রোগী, যিনি নাকে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসেন গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গত ৯ জানুয়ারি তার সফল অপারেশন করা হয়। তিনি বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। দুই-একদিনের মধ্যেই তিনি ভুটানে চলে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক রায়হানা আওয়াল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ মামুন খান।