শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

হুহু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

যাযাদি ডেস্ক
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হুহু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

পেঁয়াজের বাজারে রীতিমতো 'আগুন' লেগেছে, প্রতিদিন হুহু করে বাড়ছে দাম। কী কারণে এভাবে দাম বাড়ছে তা জানেন না ক্রেতারা, অথচ খেসারত তাদেরই দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি কোনো সংস্থাকে বাজারে তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।

গত মাসের মাঝামাঝি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কিন্তু মাসের শেষের দিকে এসে কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় দাঁড়ায়। এরপর ফেব্রম্নয়ারির প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ছিল। শুক্রবার এক লাফে কেজি হয়ে যায় ১২০ টাকা। শনিবার গিয়ে ঠেকেছে ১৩০ টাকায়। ফলে দেখা গেল মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন বেড়েছে ৩ টাকার বেশি।

শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ একেবারেই শেষের দিকে হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে বাজারে। তাই এই দাম বাড়ার প্রবণতা আরও কয়েক দিন থাকবে। এরপর হালি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে দাম অনেক কমে যাবে।

হঠাৎ পেঁয়াজের এমন বাড়তি দামের বিষয়ে বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম শুক্রবার থেকে বাড়তি যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারে দাম পড়েছে প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। এরপর আছে পরিবহণ খরচ, রাস্তা খরচ, দোকান খরচ। সব মিলিয়ে শনিবার পেঁয়াজ ১২০/১৩০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কেনা পড়ত ৮০/৮৫ টাকা, তখন খুচরা দোকানে ১০০/১০৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় আর পারছেন না।

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বাজার করতে গিয়ে পেঁয়াজের দাম শুনে নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, '৩/৪ দিন আগেই পেঁয়াজ কিনলাম ১০০ টাকা কেজি। এখন দেখছি ১৩০ টাকা। তিন দিনের মধ্যে এক লাফে ৩০ টাকা বেড়ে গেল আর সরকার কিছুই করল না!'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে এভাবে যখন তখন পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেবে অথচ বাজার তদারকি, মনিটরিং থাকবে না, এটা কেমন কথা? আমরা কী

সবসময় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে হার মানতে থাকব?'

পাবনা থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় খুচরা বিক্রি করেন আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পাবনাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কেনা পড়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়, সেই পেঁয়াজ রাজধানীতে খুচরা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহে সেখানে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ কেনা পড়ত ৩ হাজার ২শ' থেকে ৩ হাজার ৪শ' টাকা, বর্তমানে পড়ছে ৩ হাজার ৮শ' থেকে ৩ হাজার ৯শ' টাকা।

তিনি আরও বলেন, নতুন পেঁয়াজ বা মুড়িকাটা কৃষকের পেঁয়াজ তোলা শেষের দিকে। প্রায় দেড় মাস আগে এই পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছিল, এখন কৃষকের সেই পেঁয়াজ শেষের দিকে। ফলে সরবরাহ কমতে শুরু করেছে, আর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এখন কৃষকের মূল পেঁয়াজ তথা হালি পেঁয়াজ যেটা বছর জুড়ে পাওয়া যায় সেই পেঁয়াজ উঠতে কিছুদিন সময় লাগবে। সে পর্যন্ত এমন বাড়তি দাম থাকতে পারে বাজারে।

অন্যদিকে মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার খুচরা বিক্রেতা মুদির দোকানি হালিম উদ্দিন বলেন, 'কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য পাইকারি বাজারে প্রতি পালস্নার (৫ কেজিতে এক পালস্না) দাম পড়ে যাচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকা। সেই পেঁয়াজ পরিবহণ খরচ দিয়ে এনে অন্যান্য সব খরচের হিসাব করে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা যখন পাইকারি বাজারে বেশি দামে কিনে আনি তখন আমাদের খুচরা দোকানে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। যখন পাইকারি বাজারে কম দামে পাব, তখন আবার কম দামেই বিক্রি করব।'

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-এর (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, শুক্রবার বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৯০ টাকা আর এক মাস আগে ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার বাজারে গত দুদিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩০ টাকা। কুষ্টিয়া শহরের বাজারগুলোতে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। যা গত বৃহস্পতিবার ছিল ৯০ টাকা। ফলে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অকারণে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে বাজারের প্রতি নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভোক্তারা। শনিবার কুষ্টিয়া পৌর কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

লিংকন নামে এক ক্রেতা বলেন, 'কুষ্টিয়ার বাজারে হুহু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার ৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। দুই দিনের ব্যবধানে ১২৫ টাকা কেজি দরে কিনলাম। ব্যবসায়ীরা অকারণে মন মতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজার মনিটরিং না করার কারণে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারে খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'দুই দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার আড়তদারের কাছে থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কিনেছি ৮৫ টাকায় আর বিক্রি করেছি ৯০ টাকায়। শুক্রবার পাইকারি কিনেছি ১০৫ টাকায় আর বিক্রি করেছি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। শনিবার কিনেছি ১১৫ টাকায় আর বিক্রি করছি ১২০ টাকায়। তবে আজকে কেউ কেউ ১২০ টাকাতেও পাইকারি কিনেছে, তারা ১২৫ টাকায় বিক্রি করছে। আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমরা খুচরা ব্যবসায়ী, বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি। কম দামে ক্রয় করতে পাকলে কম দামে বিক্রি করি।'

আলী ভান্ডার পেঁয়াজের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী তফেজ উদ্দিন বলেন, 'দাম বাড়ার পেছনে আমাদের কোনো হাত নেই। পেঁয়াজের আমদানি কম, চাহিদা বেশি। আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমে যাবে। গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করেছি ৮৫ টাকা দরে, শনিবার ১১০ টাকায় বিক্রি করেছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে