পাকিস্তানে নির্বাচন

বেশি আসনে জিতেও মসনদ অধরা ইমরান সমর্থকদের

জোট সরকার গঠনে মতানৈক্য নওয়াজ-বিলওয়ালের

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রায় ৫০ ঘণ্টা পরও ভোট গণনার ফলাফলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। তার আগেই হাত মেলানোর কথা ঘোষণা করেছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির জোট গড়ায় পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবেন তারা। ফলে বেশি আসনের জিতেও মসনদ অধরা থাকছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিপিআই)। বিলাওয়ালের বাবা তথা প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং নওয়াজ শরিফ শুক্রবার রাতে ভোটগণনার প্রবণতার আঁচ মেলার পরেই বৈঠকে বসেছিলেন। শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে দু'দল ভোট-পরবর্তী জোটের ঘোষণা করেছে। পাক জাতীয় পরিষদের এখন মোট আসন ৩৩৬। কিন্তু তার মধ্যে সরাসরি ভোট হওয়ার কথা ছিল ২৬৬ আসনে। তবে এক প্রার্থীর মৃতু্যর কারণে ২৬৫টি আসনে ভোট হয়েছে। বাকি ৭০টি আসন মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য ৬০ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি আসন। পাক সংবিধান অনুযায়ী সরাসরি ভোটে যে দল যে সংখ্যক আসনে জয় পাবে, সেই অনুপাতে ওই সংরক্ষিত আসনগুলোতে প্রতিনিধি ঠিক করে দলগুলো। যদিও এই সংরক্ষিত আসনগুলোর ওপর সরকার গঠন নির্ভর করে না। সেই হিসাব হবে সংরক্ষিত বাদ দিয়ে ২৬৫টি আসনের মধ্যে। সেই অর্থে বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৩৩ জন জয়ীর সমর্থন পেলেই জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার 'জাদুসংখ্যা' ছোঁয়া সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত পিএমএলএন ৭১ এবং \হপিপিপি ৫৩টিতে জিতেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত নির্দলীয়রা ৯৯ এবং নির্দল ও অন্যেরা এখন পর্যন্ত ২৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে জোট। এ ছাড়া নির্দল এবং জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের মতো কট্টরপন্থি কয়েকটি দলের সমর্থনও তারা পেতে পারে। পাক নির্বাচন কমিশন 'রাজনৈতিক দল' হিসেবে পিটিআইয়ের স্বীকৃতি বাতিল করায় তারা সরাসরি ভোটের ময়দানে নেই। কিন্তু ইমরানের দলের অনেক নেতাই 'নির্দল' হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফল বলছে, এখন পর্যন্ত জাতীয় পরিষদে জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে নির্দলেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাছাড়া খাইবার-পাখতুনখোয়ার আওয়ানি ন্যাশনাল পার্টি, সিন্ধের মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট এবং কয়েকটি বালুচ সংগঠনের সমর্থনও ইমরানের অনুগামীদের দিকে থাকতে পারে। বস্তুত দু'টি ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জেলবন্দি ইমরান শনিবার সকালে সমাজমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) সাহায্যে 'বিজয়ভাষণ'ও দেন। তিনি বলেন, 'নওয়াজ শরিফের 'লন্ডন পরিকল্পনা' ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের জনতা আমাদের বিপুলভাবে সমর্থন করেছেন।' এর পরেই জনতার উদ্দেশে তার আবেদন, 'আপনারা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন, এবার তা রক্ষার দায় আপনাদেরই।' বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়ক সরাসরি কিছু না বললেও তার টিমের অভিযোগ, শেষ বেলায় পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে শরিফ-সমর্থক সেনাবাহিনী বেশ কিছু আসনে ভোটের ফল বদলে দিতে সক্রিয় হবে। শেষ পর্যন্ত তা না হলেও ইমরানকে ঠেকাতে পাক সেনাবাহিনী শরিফ-ভুট্টো জোট গড়তে তৎপরতা দেখাবে বলে আঁচ দিয়েছিল পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশও। কার্যত তা সত্যি হতে চলেছে। একদা প্রবল প্রতিপক্ষ পিএমএলএন এবং পিপিপি অবশ্য বছর দু'য়েক আগেই কাছাকাছি এসেছিল। ২০২২ সালে এপ্রিলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গরিষ্ঠতা হারিয়ে ইমরান সরকারের পতনের পরে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ। বিলাওয়াল ভুট্টো ছিলেন সেই সরকারের বিদেশমন্ত্রীর পদে। এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, মুসলিম লীগের নেওয়াজের সঙ্গে জোট গঠনে শর্তজুড়ে দিয়েছে পিপিপি। পিপিপির শীর্ষ মুখপাত্র খুরশিদ শাহ বলেছেন, 'নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হতে চান। এজন্যই জোট গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছেন। জোট সরকারের অংশ হতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা তাকে (নওয়াজ) প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখতে চাই না। আমরা চাই, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন আমাদের দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।' খুরশিদ শাহ আরও বলেন, 'এখনো তো সবগুলো আসনের ফলাফল আসেনি। তার (নওয়াজ) এত ব্যস্ততা কীসের? যাই হোক, আমরা আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।' এদিকে পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর খান দাবি করেন, পিটিআই জাতীয় পরিষদের ১৫০টি আসন জিততে যাচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন অর্জন করতে সক্ষম হবে। ব্যারিস্টার গোহর বলেন, 'আমরা পিপিপি এবং পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করতে চাই না। আমরা কেন্দ্র এবং পাঞ্জাবে সরকার গঠন করব। খাইবার পাখতুনখোয়ায় পিটিআই স্পষ্টতই এগিয়ে আছে এবং সেখানেও সরকার গঠন করবে। পিটিআই সংসদে থাকবে এবং তার কাজ করে যাবে।' তিনি আরও বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পিটিআই সমর্থিত এবং তারা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দলীয় নির্দেশের বিরুদ্ধে কোনো দলে যোগ দেবেন না। আজ পিটিআইয়ের বিক্ষোভ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশে আরও বিলম্ব হলে আজ রোববার বিক্ষোভ করবে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়। সংবাদ সম্মেলনে দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান গহর আলী খান বলেন, 'বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের ফলাফল আটকে রাখা হয়েছে এবং বিলম্ব করা হচ্ছে। বিজয়ী আসনে আমাদের পরাজিত দেখাতে, ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকায় ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে, সেসব এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের বাইরে রোববার আমরা বিক্ষোভ করব।'