বাংলা ভাষাকে উর্দুতে প্রবর্তন চেষ্টার প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া আন্দোলন কিছুতেই দমাতে পারেনি দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী। আন্দোলনরতদের ওপর লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং পাইকারি গ্রেপ্তারেও থামেনি আন্দোলন। ১৯৫২ সালে এসে ভাষা রক্ষার আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল বাঙালি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ৪ ফেব্রম্নয়ারির ছাত্র সমাবেশের পর প্রতিদিন রাজপথে চলতে থাকে মিছিল সমাবেশ। কিন্তু গোঁয়ার পাকিস্তানিরা একের পর এক কূটকৌশলের আশ্রয় নিতে থাকে। সেগুলোরই মধ্যে অন্যতম একটি কৌশল ছিল আরবি হরফে বাংলা লেখানোর অপচেষ্টা।
১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রম্নয়ারি ছিল অন্যদিনের মতোই তাৎপর্যপূর্ণ। মায়ের ভাষার প্রতি উন্মত্ত ভালোবাসা সেদিনের সেই সংগ্রামীদের সাহস জুগিয়েছিল বুকের তাজা রক্ত ঝরাতে। রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে মায়ের ভাষা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেদিন বুকে ধারণ করেছিলেন একই শপথ। মায়ের ভাষা বাংলাকে যে কোনো মূল্যে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে হবে। পূর্ববাংলায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বাংলা ভাষা। শাসকগোষ্ঠী যেহেতু স্বীকৃতি দেবে না, তাই তাদের ষড়যন্ত্রও অব্যাহত থাকল। ষড়যন্ত্রের ধরন সম্পর্কে ওই সময়কার কিছু লেখা থেকে জানা যায়, পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের বৈঠকে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলস্নাহর সহায়তা আশা করা হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মাহমুদ হাসান সহায়তা চেয়ে তাকে চিঠি লেখেন। এতে বলা হয়, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, পাকিস্তানকে ইসলামি মতে গঠন করতে এবং সেই উদ্দেশ্যে তারা বাংলা ভাষাকে উর্দুতে প্রবর্তন করতে চায়। কিন্তু সঙ্গত কারণেই ওই চিঠির কোনো জবাব দেননি বাংলা ভাষার এই পন্ডিত। নিজের ভাবনার কথা তিনি লিখে পাঠান সংবাদপত্রে। আর এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে মাহমুদ হাসান ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলস্নাহকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে উলেস্নখ করেন।
পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি বলেন, একই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পথে যেসব অসুবিধা আছে, তার মধ্যে নানা রকম হরফের সমস্যাটি অন্যতম। এ সময় নিজের পুরনো মতের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এসবের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সভা করেন। মুস্তফা নূরউল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংসদ গঠন করা হয়। একই সময় গঠিত হয় বর্ণমালা সাব-কমিটি। জগন্নাথ ও ইডেন কলেজ মিলনায়তনেও প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। এ অবস্থায়ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় আরবি হরফে লেখা বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য ২০টি কেন্দ্র খোলা হয়। এ সময় উর্দু হরফে বাংলা বই লিখে দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতি দৃঢ় করার নামে চলা এ অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
সূত্র: রফিকুল ইসলাম, ভাষাসংগ্রামী; ইমেরিটাস অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ঢাকা।