রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ঢাকায় দুই ট্রেনে আগুন

মামলার তদন্ত নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ!

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মামলার তদন্ত নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ!

রাজধানীর তেজগাঁও ও গোপীবাগে দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশ এখনো অন্ধকারে। তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের প্রায় দুই মাস পার হয়েছে। আর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে।

কিন্তু দুই মামলার কোনোটির তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। দুই ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় মামলা দুটির তদন্তভার ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ (জিআরপি) থেকে পৃথক দুই সংস্থায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনোয়ার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মা-শিশুসহ চারজনের মৃতু্য হয়। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই দিন আগে গত ৫ জানুয়ারি রাতে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে চারজনের মৃতু্য হয়।

দুই ঘটনায় ঢাকা রেলওয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। নাশকতার এই দুই মামলার তদন্ত শুরু করে ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ (জিআরপি)। মামলা দুটির তদন্ত তদারক কর্মকর্তার দায়িত্ব পান রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওর্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)।

রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, 'ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠতে দেখা যায়। ট্রেনে আগুন জ্বলতে দেখার আগে তারা তেজগাঁও স্টেশনে নেমে যান। সেখানে তাদের সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা গেলে হয়তো এই অগ্নিসংযোগের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যেত। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার যুবদল নেতা মুকিতের কাছ থেকে ট্রেন আগুন লাগানোর বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অপর মামলাটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি নেতা নবীউলস্নাহ নবী ও যুবদল নেতা কাজী মনসুর আলমকে আটক করে ডিবি। পরে এই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখায় ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠান আদালত। রিমান্ডে তারা বলেছিলেন, গত ৪ জানুয়ারি নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে যুবদলের এক নেতা ট্রেনে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব নেন। কিন্তু যুবদলের এই নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে হয়তো অগ্নিসংযোগকারীদের ব্যাপারে জানা যেত।

রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, মামলা দুটি পৃথক দুই সংস্থায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মামলাটির তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) যাবে। বেনাপোল এক্সপ্রেসে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মামলাটি পাঠানো হবে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)।

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগানোর ঘটনায় গত ২১ ডিসেম্বর র?্যাব-১ সন্দেহভাজন হিসেবে ৯ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। র?্যাব বলেছে, ট্রেনে আগুন দেওয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে র?্যাব-১ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, 'মোহনগঞ্জ ট্রেনে আগুন লাগানোর মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।'

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত চারজনের নাম জানতে পারার কথা র?্যাব-৩ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। গত ২১ ডিসেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে র?্যাব-৩ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, এই চারজনের দুজন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী। বাকি দুজন ভাসমান (নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই) ব্যক্তি। পরে অবশ্য আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন তারা যাদের নাম জেনেছিলেন তাদের সঙ্গে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া ছবি মেলেনি।

গত ২১ ডিসেম্বর ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। পরে ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার যুবদল নেতা মুকিতের কাছ থেকে ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এই মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।

অন্যদিকে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি নেতা নবীউলস্নাহ ও যুবদল নেতা মনসুর জড়িত বলে দাবি করে ডিবি। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য ডিবি তাদের ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তবে এই মামলায় অগ্নিসংযোগকারীদের এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে