এককভাবে সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী পিটিআই ভোটে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভরাডুবি
পাকিস্তানের নির্বাচনে এগিয়ে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্ররা
মোট আসন ২৬৫টি ফল ঘোষণা ১৫৮টি ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র ৬০ পিপলস পার্টি ৩৬ মুসলিম লিগ ৪৬ অন্যান্য ১৬
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
পাকিস্তানের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ফল ঘোষণায় বেশ দেরি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যাচ্ছে। তবে বেশ খানিকটা এগিয়ে আছেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই অবস্থান নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল) ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি)। তথ্যসূত্র : বিবিসি, ডন, আল-জাজিরা, জিও নিউজ
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ২৬৫ আসনের মধ্যে ১৫৮টির ফল ঘোষণা করেছে। আসনভিত্তিক প্রাপ্ত ফলে জেতার দিক থেকে এগিয়ে আছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা এখন পর্যন্ত ৬০টি আসনে জয়লাভ করেছেন। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩৬টি আসন। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় থাকা নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল) এখন পর্যন্ত ৪৬টি আসন পেয়েছে। বাকি ১৬টি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য প্রার্থীরা।
এদিকে, নির্বাচনের ফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নানা দিক থেকে প্রশ্ন উঠছে। তাছাড়া প্রথম দিকে যেসব প্রার্থী অনেক বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন, এখন শেষদিকে দেখা যাচ্ছে, তারা হেরে যাচ্ছেন। নির্বাচনের ফল ম্যানুপুলেটিং বা কারসাজি করা হচ্ছে কি-না তা নিয়েও সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। যদি তাই হয়, তবে সেটি হবে পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বড় তামাশা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পাকিস্তানের গণতন্ত্র, নষ্ট হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
ব্যাপক ধরপাকড়, অত্যাচার ও নিপীড়নের পরও সবশেষ প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থীরা স্পষ্টভাবে এগিয়ে রয়েছেন। ফলে অনেকেই মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে কেউ সরকার গঠনের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তাই জোট সরকার নিয়ে নানা জল্পনা ছড়াচ্ছে।
এককভাবে সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী
ইমরান খানের দল
এদিকে, তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সিনিয়র নেতা গহর আলি খান পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা নওয়াজের দলের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'দল দুটির সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। পিটিআই নিজেই ১৫০ আসনে জয় পাবে এবং কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে।' তিনি বলেন, 'আমরা (পিটিআই) পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদেও সরকার গঠন করব।'
শুক্রবার সকাল থেকেই পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলোতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার খবর আসতে থাকে। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি হাইলাইট পাওয়া নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) পিছিয়ে থাকার খবর আসে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার এনএ-১৫ মানসেহরা আসনে ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদা গাস্তাসাপের কাছে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক ভোটে পরাজিত হয়েছেন নওয়াজ শরিফ। তবে লাহোরের এনএ- ১৫ (লাহোর ১৪) আসনে জয়লাভ করেছেন নওয়াজ শরিফ। এই আসনে তিনি এক লাখ ৭১ হাজার ২৪ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত ড. ইয়াসমিন রশিদ পেয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৪৩ ভোট।
ভোটে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভরাডুবি
এখন পর্যন্ত নির্বাচন ঘোষিত ফলে দেখা গেছে, পাকিস্তানের এই নির্বাচনে অনেক দলীয় প্রধান, হেভিওয়েট প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (এফ) সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান। পরাজয় বরণ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির সিরাজুল হক।
এ ছাড়া পরাজিত হয়েছেন নওয়াজ শরিফের দলের বিশিষ্ট নেতা সাদ রফিক, আইপিপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর তারিন, পিটিআই নেতা পারভেজ এলাহি, আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টির ওলি খান, আইএনপির আমির হায়দার হুতি, শাহ হামজা কুরাইশির মেয়ে মেহেরবানু কুরাইশি, মুসলিম লিগ (এন) নেতা জাবেদ লতিফ, প্রাদেশিক মন্ত্রী গোলাম আহমদ বালুর।
উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র ১০ মিনিট আগে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় পাকিস্তানে। কল ও ডেটা সেবা, কোনোটিই সচল ছিল না। গত বুধবার হামলার ঘটনা মোবাইল পরিষেবা বন্ধের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেদিন পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে প্রার্থীদের কার্যালয়ে দুটি পৃথক বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকায় এখন নির্বাচনী ফল আসতে দেরি হচ্ছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে বলেছে।