বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব
তুরাগ তীরে জুমার নামাজে লাখো মুসলিস্নর ঢল
৫৬ দেশের ছয় হাজারের বেশি মুসলিস্নর অংশগ্রহণ
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে। এদিন লাখো মুসলিস্নর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় জুমার নামাজ। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠে সমবেত হতে থাকেন মুসলিস্নরা। দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলিস্ন জুমার নামাজে অংশ নেন। শুক্রবার দুপুর ১টায় ময়দানে জুমার আজান হয়। ১টা ৩৫ মিনিটে খুতবা শুরু হয়। জুমার নামাজ শেষ হয় ১টা ৫৭ মিনিটে। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহ এবং বিশ্ববাসীর শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়। ইমামতি করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।
জানা যায়, শুক্রবার ফজরের নামাজের পর উর্দু ভাষায় বয়ান করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী। তা বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশি মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। এ ছাড়া সকাল ১০টায় ভারতের মাওলানা ইলিয়াস তালিমের মৌজু, জুমার আগে জুমার ফাজায়েলের ওপর ১০ মিনিট বয়ান করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
দুপুর ১২টায় ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া টঙ্গীর বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদ থেকেও মুসলিস্নরা জুমার নামাজে অংশ নেন। এতে মূল প্যান্ডেল ছেড়ে আশপাশে মুসলিস্নদের ঢল নামে। মুসলিস্নরা জায়গা না পেয়ে আশপাশের সড়কে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, জুমার পরে বয়ান করেন শেখ মোফলে (আরবি), তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা শেখ আব্দুলস্নাহ মনসুর, আসরের পর বয়ান করেন মাওলানা মোশাররফ, মাগরিবের পর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ, তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা জিয়া বিন কাশেম। প্রায় ৫৬টি দেশ থেকে ছয় হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে সফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিদিন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানে মুসলিস্নদের খেদমতে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
আসছেন ভারতের মুসলিস্নরা
এদিকে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মুসলিস্নরা আসছেন বাংলাদেশে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের মুসলিস্নরাও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করছেন।
শুক্রবার সকালে দেখা যায়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মুসলিস্নরা ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। গত তিনদিনে প্রায় ১২০০ মুসলিস্ন এসেছেন বাংলাদেশে। তবে এবারের ইজতেমায় যোগ দিতে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক কমসংখ্যক বিদেশি মেহমান বাংলাদেশে আসছেন বলে জানা গেছে। গত কয়েক মৌসুমে এই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার বিদেশি মুসলিস্ন ইজতেমায় যোগ দিতে আসতেন। কিন্তু চলতি ইজতেমায় শুক্রবার ৯টা পর্যন্ত মাত্র ১২০০ ভারতীয় মুসলিস্ন এসেছেন বলে ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে।
ইজতেমার দ্বিতীয় দফায় যোগ দিতে আরও কিছু বিদেশি মেহমান আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার দ্বিতীয় পর্বে ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভারতীয় মুসলিস্নরা বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে বাস কিংবা ট্রেনযোগে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে যাচ্ছেন। তবে ইমিগ্রেশনের ভেতরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেখা গেছে মুসলিস্নদের।
বেনাপোল স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি মেহমানদের অভ্যর্থনা জানানো, থাকা-খাওয়া ও ঢাকায় পাঠানোসহ সব কাজ দ্রম্নত করার জন্য তাবলিগ জামাতের ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে একটি প্রতিনিধিদল বেনাপোল স্থলবন্দরে অবস্থান করছেন। তারা প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আগত মুসলিস্নদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের পরিদর্শক (তদন্ত) শফিক আহমেদ জানান, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মুসলিস্নরা বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসছেন। এবার খুবই কমসংখ্যক মুসলিস্নরা এসেছেন। বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা বিদেশি মেহমানদের দ্রম্নততার সঙ্গে পাসপোর্টের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। বেনাপোল পুলিশ ইমিগ্রেশনে পৃথক ডেস্ক খোলা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের পুলিশ ইমিগ্রেশন সদস্যরা সেবা দিচ্ছেন। বিদেশি মেহমানদের সেবা করতে পেরে নিজেদের ভালো লাগার কথাও প্রকাশ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।