রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
অবকাঠামোগত দুর্বলতা

আমদানিতেও কাটছে না গ্যাস সংকট

রেজা মাহমুদ
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আমদানিতেও কাটছে না গ্যাস সংকট

নিজস্ব ও আমদানিকৃত গ্যাস পরিবহণ এবং খালাসে পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় আমদানি বাড়িয়েও সরবরাহ স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। দেখা গেছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে পরিবহণে সক্ষমতার চেয়ে বর্তমান ঘাটতি দ্বিগুণেরও বেশি। যদিও নিজস্ব গ্যাসের ঘাটতি ও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে চাহিদা মেটাতে বরাবরই আমদানিকেই বিকল্প ভেবেছে জ্বালানি বিভাগ। এছাড়াও সঞ্চালন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও জাতীয় গ্রিডে পরিবহণের জন্য পাইপলাইন থাকায় ভোলাসহ স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত গ্যাস যোগ হচ্ছে না জাতীয় গ্রিডে। এদিকে গ্যাস পরিবহণে সীমাবদ্ধতা থাকলেও বাড়ানো হচ্ছে এলএনজি আমদানির পরিমাণ।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, জ্বালানি বিভাগ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিজস্ব খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে ধীর নীতি অবলম্বন ও অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ করেছে। বিশেষ করে উত্তোলন সক্ষমতা তৈরি ও সঞ্চালনে অবকাঠামোগত খাতে বিনিয়োগ ঘাটতির ফলে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে এসেছে।

এদিকে দিনে প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ মাত্র ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যেহেতু একটি টার্মিনাল বন্ধ তাই আমদানিকৃত এলএনজির সরবরাহ কমেছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে অনীহা আজকের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ক্রমাগত আমদানি বাড়ানো হলেও টার্মিনালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি।

অন্যদিকে অবকাঠামো না থাকলেও বাড়ছে আমদানি, দীর্ঘমেয়াদের পাশাপাশি আগামী জুলাই পর্যন্ত স্পট থেকে প্রায় হাফ ডজন বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে আমদানি চুক্তি করা হয়েছে। যার অর্থ জোগানে নেওয়া হচ্ছে বড় অঙ্কের ঋণ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেদ্দাভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইসলামিক ট্রেড অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল করপোরেশনের আপৎকালীন তহবিল থেকে নতুন জ্বালানি আমদানি ও বকেয়া পরিশোধে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি করেছে জালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। এরই মধ্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে কেবল এলএনজি আমদানিতে। এর বাইরেও জ্বালানির আমদানি বিল পরিশোধে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিমাসেই আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে গড়ে দুই কারগো করে এলএনজি আমদানি বাবদ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

তবে আমদানিকৃত গ্যাস পরিবহণে পাইলাইন ও নতুন এলএনজি টামির্নাল তৈরি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে পেট্রোবাংলা। সংস্থাটির হাতে নেওয়া এসব প্রকল্পের সুবিধা পেতে অপেক্ষা করতে হতে পারে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। সেই হিসাবে এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

২০২৬ সালের মধ্যেই ১০ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি নতুন চারটি এলএনজি আমদানি চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা। এই চুক্তির আওতায় বছরে আরও ৬ মিলিয়ন টন এলএনজি পরিবহণ করতে হবে। তবে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যমান পাইপলাই দিয়ে নতুন চুক্তির গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। তবে জাতীয় গ্রিডে এলএনজির সরবরাহ বাড়াতে ২৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন (মহেশখালী/মাতারবাড়ী-বাখরাবাদ) নির্মাণের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তা দ্রম্নত বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও এ প্রকল্প এখনো পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, এই পাইপলাইন তৈরিতে ব্যয় হয়ে প্রায় ১৪০ কোটি ডলার। কিন্তু এর নির্মাণের সময়সীমা সময় ধরা হয় ২০২৯ সাল। সেই হিসেবে ২০২৬ সালে দীর্ঘমেয়াদি আমদানি চুক্তির আওতায় এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশ্লেষকরা। ফলে আমদানি ও পাইপলাইনে এই বিশাল বিনিয়োগের সুফল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, বিদ্যমান পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে দু'টি ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে ৭৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ হচ্ছে। ফলে নতুন চুক্তির আওয়তায় আদানি শুরু হলে এ পাইপলাইনে আর ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ করতে পারবে পেট্রোবাংলা।

নতুন ও সম্ভাব্য এলএনজি চুক্তি ও টার্মিনালের সক্ষমতা

২০১৮ সালে করা বিদ্যমান দু'টি চুক্তির পাশাপাশি তিনটি দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৬ সাল থেকে ওমানের ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেডের (ওকিউটি) সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদে, প্রতি বছর দশমিক ২৫ মিলিয়ন টন থেকে সর্বোচ্চ দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি; কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসির সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদে, বছরে দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি; আমদানি চুক্তি যার সময় শুরু হবে ২০২৬ সালে। একই হিসাবে বেসরকারি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি থেকে বছরে এক মিলিয়ন টন করে এলএনজি কিনবে সরকার।

এর বাইরে সামিট গ্রম্নপের সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বছরে আরও দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি ক্রয় করার পারিকল্পনা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। চুক্তি অনুয়ায়ী আমদানি শুরু হবে ২০২৬ সালে। সব মিলিয়ে ২০২৬ সালে বিদ্যমান চুক্তি আওতায় বছরে চার মিলিয়ন টন এবং নতুন চারটি চুক্তি আওতায় আরও প্রায় ৬ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি হবে।

বর্তমানে দেশে আমদানিকৃত এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দেশে ভাসমান টার্মিনাল আছে দু'টি। সামিট ও এক্সিলারেটের মালিকানাধীন টার্মিনাল দু'টি থেকে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের কথা। তবে এ সক্ষমতা এখন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে