২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আজ (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে একযোগে রাজধানীসহ ১৫ জেলা ও বিভাগীয় শহরের ১৯ কেন্দ্রের ৪৪ ভেনু্যতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এক ঘণ্টার এ পরীক্ষা চলবে সকাল ১১টা পর্যন্ত। এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৪ হাজার ৩৭৪ জন।
বৃহস্পতিবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি পরীক্ষা পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসব তথ্য জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে যার মোট আসন
সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে অনুমোদিত ৬৭টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে যার মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ২৯৫টি।
প্রশ্নফাঁস বন্ধে ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'স্বচ্ছতা আনতে, শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজে বিগত কয়েক বছর অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ডিজিটালাইজেশনের ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়েছে। একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, এর আগে অনিয়ম রোধ এবং শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের হয়রানি, অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পথ বন্ধ হয়েছে এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জনগণের মাঝেও ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। প্রশ্নপত্র বহনকারী ট্রাঙ্কে একটি ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস রয়েছে, যার মাধ্যমে অধিদপ্তর থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র আনা-নেওয়া কার্যক্রম মনিটরিং করা হয়।
ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ও দায়িত্বরতদের নির্দেশনা
ভর্তি পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় হলের গেট খুলবে। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্রের রঙিন প্রিন্ট কপি নিয়ে আসবেন।
কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের (ছেলে ও মেয়ে) পৃথক পৃথক তলস্নাশির ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র ও বলপয়েন্ট কলম ছাড়া অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে যাতে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য মেটাল ডিটেক্টরের পাশাপাশি আর্চওয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের বিষয়টি তদারকি করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে ইনভিজিলেটররা (কক্ষ পরিদর্শক) সকাল ৮টা থেকে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্ষে অবস্থান করে প্রবেশপত্রে পরীক্ষার্থীর ছবির জলছাপ ও রঙিন ছবির সঙ্গে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
পরীক্ষার্থী, ইনভিজিলেটর ও ভেনু্যর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কোনোভাবেই মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, বস্নু-টুথ, এয়ারফোন ইত্যাদি বহন করবেন না। পরীক্ষার হলে ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত কেউ মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র বা ভেনু্যতে ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবেন না।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, 'গত ১০ জানুয়ারি থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের সেন্টারগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইন কোচিং বন্ধ ও সাইবার অপরাধ রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পরীক্ষার দিন কেন্দ্রগুলোর আশপাশের ফটোকপি মেশিন বন্ধ থাকবে। পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো ধরনের অসদাচরণ বা প্রতারণা বা গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত কাউকে চিহ্নিত করা গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
১৯টি পরীক্ষা কেন্দ্র
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম। কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ, কুমিলস্না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। খুলনা মেডিকেল কলেজ, খুলনা।
এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর। এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট। মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ। পাবনা মেডিকেল কলেজ, পাবনা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী। রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া। শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, গোপালগঞ্জ। স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা।
৬ মেডিকেল কলেজে
শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ
এদিকে মানসম্মত শিক্ষা ও কার্যক্রমে ঘাটতি থাকায় দেশের ছয়টি মেডিকেল কলেজে এমবিএবিএস ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মেডিকেল কলেজের নিবন্ধন বাতিল ও চারটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি স্থগিত রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা বলেন, 'মান সঠিকভাবে বজায় না থাকায় ছয়টি মেডিকেল কলেজে আমাদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ আছে। এদের মাঝে দুটি মেডিকেল কলেজের নিবন্ধন বাতিল ও চারটিতে ভর্তি স্থগিত রাখা হয়েছে। যে চারটিতে ভর্তি স্থগিত সেগুলো হলো- আইচি মেডিকেল কলেজ, নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ-ধানমন্ডি, নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ-রংপুর, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ রাজশাহী। নিবন্ধন বাতিল হয়েছে কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ-আশুলিয়ার।'
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে- সে হিসেবে মেডিকেল কলেজে ভর্তির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তাদের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, 'এসব মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য উপযুক্ত নয়। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আইন পাস হয়েছে। অতীতে আইনের ব্যত্যয় ঘটতে পারে। মাত্র মন্ত্রিত্ব পেলাম। বিষয়গুলো দেখছি। যেখানে শিক্ষক নেই সেখানকার কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। আমরা কোয়ালিটি চিকিৎসক তৈরি করব।'