সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি
এখন ক্রসফায়ারের মুখে দেশ
সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ৫০ লাখ নেতাকর্মী নাগরিক জীবন থেকে বঞ্চিত নির্বাচন ছিল জাতির সঙ্গে সহিংস প্রতারণা
প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রতিবেশী দুটি দেশের সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার ঘটনা ঘিরে সংবাদ সম্মেলন করছে বিএনপি। বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন দাবি করে দলটি বলেছে, বাংলাদেশ এখন ক্রসফায়ারের মুখে। সরকার নিজ অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে-অবৈধ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে- আদায় করেছে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন। বিশেষত নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, অসম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, নামমাত্র মূল্যে ট্রানজিট সুবিধা, পানি সমস্যার সমাধানহীনতা, গোপন আদানি চুক্তিসহ, জাতীয় স্বার্থবিরোধী অজস্র প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক লবিং। অবৈধ ও ডামি এই সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বুধবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন, হারুন উর রশীদ প্রমুখ।
এক প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'একদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরম্ভ করে সীমান্তে প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণের মাধ্যমে আমাদের বিজিবি সদস্য ও দেশের জনগণকে হত্যার করছে, আবার পূর্ব দিক থেকে মিয়ানমারের পুলিশ ও সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলিতে এ পর্যন্ত দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে রাখাইন থেকে সেনা পলায়ন করে এখানে আশ্রয় গ্রহণ করছে।
এ বিষয়টি নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, সবাইকে ভাবতে হবে যে- কী ঘটতে যাচ্ছে, এর অন্তরালে কী আছে।'
গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, যার প্রমাণস্বরূপ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ভারতই আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাস, রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশের ধ্বংসযজ্ঞ এবং বিতর্কিত দেশগুলোর হস্তক্ষেপ এই সমন্বিত অপশক্তিকে উপেক্ষা করে জনগণের সমর্থনকে উৎস হিসেবে ধারণ করে বিএনপি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিচল রয়েছে।
পৃথিবীতে বিএনপির মতো নির্যাতিত আর কোনো রাজনৈতিক দল আছে কি না, সে প্রশ্ন তুলে গয়েশ্বর বলেন, 'পৃথিবীর কোন দেশে ৫০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে? কোন অপরাধে ২ হাজার ৭০০ এর বেশি নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা, প্রায় ৭০০ জন নিরপরাধ মানুষকে গুম করেছে? বানরের পিঠা ভাগের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে কেন ফ্যাসিস্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার করেছে? এই সময়ে বিএনপির রাজনীতি করার অপরাধে কেন ১১ জন কর্মীকে কারাগারে হত্যা করেছে? কিসের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাক্?স্বাধীনতা হরণ করে একের পর এক সাজানো মামলায় পাতানো রায় দেওয়া হচ্ছে? বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মী তাদের নাগরিক জীবন থেকে বঞ্চিত- এমন দাবি করে বিএনপি বলেছে, 'আমাদের প্রত্যেকে প্রতিদিন, পুলিশি নিপীড়ন ও বিচার বিভাগের অবিচারের শিকার হচ্ছি। গায়েবি ও বানোয়াট মামলায়, কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই, তালিকা করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বিএনপি ও সকল অঙ্গ-সংগঠনের সর্বস্তরের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পর্যন্ত বিস্মৃত-নির্বিচার এই গণতালিকা ও সাজানো রায় থেকে বাদ যাচ্ছেন না। এমনকি মৃত বা গুম ব্যক্তিরাও- যাঁরা একসময় বিএনপির যেকোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন- তারাও বাদ যাচ্ছেন না এর থেকে।'
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ এই সরকারের অপশাসন থেকে মুক্তি চায় বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ। বিএনপির আন্দোলনের মাধ্যমে জনবিদ্বেষী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটবে এবং দেশে আবারও সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে এবং রাজপথে গণঅভু্যত্থানের মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশে শিগগিরই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ৭ জানুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বরং নির্বাচনের নামে এটি ছিল জাতির সঙ্গে একটি সহিংস প্রতারণা- যার উদ্দেশ্য অবৈধ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিকভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা। ডামি প্রার্থী, ডামি দল, ডামি ভোটার ও ডামি পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন মঞ্চস্থ হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ফ্যাসিবাদের ভিত্তি হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি সুবিধাভোগী অংশ। পুলিশ, র?্যাব, বিজিবি, প্রশাসন ও আদালতের কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছেন। তারাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনে পরিণত করেছেন বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, দুনীতি দমন কমিশনসহ সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই প্রেক্ষিতে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জন সঠিক ও যৌক্তিক ছিল।
৩৬ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ী কয়লা বিদু্যৎ প্রকল্প পৃথিবীর সবচেয়ে খরচবহুল কয়লা বিদু্যৎ কেন্দ্র! পায়রাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার যে সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, এটি এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ খরচবহুল সমুদ্রবন্দর। রূপপুরের ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় যে পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, এটিও পৃথিবীর সর্বোচ্চ খরচের পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র। একইভাবে সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকার যে মেট্রোরেল প্রজেক্ট, প্রতি কিলোমিটার হিসেবে সেটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল। শুধু তাই না, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর-গাজীপুর র?্যাপিড বাস ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিআরটি লাইন। সরকারের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের এমন দুর্বিষহ অবস্থা যে- রাস্তা, ব্রিজ, রেল, বন্দর, বিদু্যৎকেন্দ্র- যখন যেটি বানানো হচ্ছে সেটিই দুনিয়ার সর্বোচ্চ খরচের প্রকল্প হয়ে যায়।