বালুচিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

ইমরান খানকে জেলে রেখে পাকিস্তানে নির্বাচন আজ

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে রেখেই পাকিস্তানে আজ জাতীয় ও প্রদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৪ কোটি ১০ লাখ জনগণের পারমাণবিক শক্তিধর দেশটি। এই নির্বাচনে ইমরানের দল ও আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এ দিন দেশটির ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার তাদের পরবর্তী সরকার কারা গঠন করবে তা আজ নির্ধারণ করবে। একই দিন দেশটির চারটি প্রদেশের আইনসভার নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। একজন ভোটার দু'টি করে ভোট দেবেন, একটি জাতীয় আইনসভার জন্য অপরটি প্রাদেশিক আইনসভার জন্য। জাতীয় আইনসভার আসন সংখ্যা ২৬৬টি। এর মধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশে আছে সবচেয়ে বেশি, ১৪১টি আসন। সিন্ধু প্রদেশে ৬১টি, খাইবার পাখতুনখওয়ায় ৪৫টি, বেলুচিস্তানে ১৬টি ও রাজধানী ইসলামাবাদ অঞ্চলে ৩টি। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে এবং একটানা চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। সহিংসতা বা কোনো ঝামেলার কারণে ভোট বিঘ্নিত হলে কর্মকর্তারা ভোটের সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন। সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না বলে দাবি করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে নওয়াজ জেনারেলদের সমর্থন পাচ্ছেন, এর আগে ২০১৮ সালে তারা ইমারনকে বেছে নিয়েছিলেন। নওয়াজ ও ইমরান, উভয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন, সামরিক বাহিনীর ইশারায় তাদের ক্ষমতাচু্যত করা হয়েছিল। কিন্তু সামরিক বাহিনী তা অস্বীকার করেছে। নওয়াজের দল মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) মঙ্গলবার প্রচারণা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপী নির্বাচনী বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তাতে তাদের দলনেতাকে 'প্রধানমন্ত্রী' বলে ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনী লড়াইয়ের আরেক প্রতিযোগী দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। সোমবার করাচিতে এক নির্বাচনী জনসভায় বিলাওয়াল বলেছেন, পাকিস্তানের এই বৃহত্তম শহর যদি তার দল পিপিপিকে (পাকিস্তান পিপলস পার্টি) ভোট দেয় তবে নিশ্চিতভাবে তিনিই হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কারাবন্দি করে ও বিভিন্ন মামলা দিয়ে টিটিপিকে প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হলেও এবং ইমরান ও তার দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা এখনো একটি বড় শক্তি হিসেবেই রয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনও ইমরান খানের দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের 'হয়রানির প্যাটার্ন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে সংগঠনের শীর্ষ কর্মকর্তা পাকিস্তানে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন?পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ অবশ্য যাবতীয় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করছে?আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ করে নির্বাচনের ওপর নজর রাখার সুযোগ করে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার?অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংগঠন পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি না করার ডাক দিয়েছে? কিন্তু নির্বাচনের আগেই ইমরান খানের বিরুদ্ধে একাধিক কারাদন্ডের রায় এবং তার দলের কার্যকলাপের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে? অতীতের মতোই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইশারায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে?এককালে নওয়াজ শরীফকে কোণঠাসা করতে ইমরান খানকে মদত দেওয়ার পর সেনা কর্মকর্তারা নাকি এবার সেই নওয়াজকেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। পিপলস পার্টির বিলাওয়াল ভুট্টোও বেশ কিছু ভোট আদায় করতে পারেন। জনমত সমীক্ষা ও একাধিক পূর্বাভাস অনুযায়ী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে জোট সরকার গড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, সামরিক বাহিনীর সম্মতি ছাড়া আগামী সরকারের পক্ষে দেশের একাধিক চ্যালেঞ্জ সামলে কার্যকাল সম্পূর্ণ করার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮ এদিকে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের এক দিন আগে বুধবার জোড়া বিস্ফোরণ অন্তত ২৮ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভি। আহতের সংখ্যা আরও অনেক। বালুচিস্তানের পিশিন জেলায় এক নির্দল প্রার্থীর দপ্তরকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা করা হয়েছে। পর পর দু'বার বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে বালুচিস্তান। প্রথম হামলাতেই অন্তত ১৫ জনের মৃতু্য হয়। জখম হন ৩০-এর বেশি। তার কিছু ক্ষণ পরে আরও একটি হামলার খবর পাওয়া যায় সেই বালুচিস্তানেই। দ্বিতীয় হামলার স্থান কিলস্না সইফুলস্না জেলার জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম ফজলের দপ্তরের সামনে। উভয় হামলার ক্ষেত্রেই লক্ষ্য ছিল নির্বাচনী প্রার্থীদের দপ্তর। পিশিনে এনএ-২৬৫ আসনে লড়ছেন নির্দল প্রার্থী আসফান্দ ইয়ার খান কাকর। তার দপ্তরের ঠিক সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ করা হয়। অন্তত ৪০ জন জখম হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আহতেরা বেশির ভাগই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। কিলস্না সইফুলস্নার দ্বিতীয় হামলাটিতে অন্তত ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে খবর। সেখানেই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন না। জিও টিভি জানিয়েছে, এই বিস্ফোরণের পর পিশিনের গোটা এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তবে যে নির্দল প্রার্থীর দপ্তরে হামলা, তিনি সেই সময়ে দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনার পর বালুচিস্তানের মুখ্য সচিব এবং পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেলের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। পিশিনের নির্দল প্রার্থী কাকর জানিয়েছেন, তার দপ্তরের বাইরে দাঁড়ানো একটি মোটর সাইকেল থেকে বিস্ফোরণটি হয়। তার দলের আট কর্মী ঘটনাস্থলেই শহিদ হয়েছেন। ওই সময়ে দপ্তরে পোলিং এজেন্টের নাম চূড়ান্ত করা হচ্ছিল। বালুচিস্তানের এক মন্ত্রী জান আচাকজাই জানিয়েছেন, মোটর সাইকেলের মধ্যে বিস্ফোরক রাখা ছিল। আরও বিশদ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার বালুচিস্তানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।