বাংলাদেশের সীমান্ত 'সুরক্ষিত আছে' দাবি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত 'সুরক্ষিত আছে' দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পালিয়ে আসা সদস্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করছে সরকার। সোমবার পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ আছে এবং আজ (সোমবার) সকালবেলা (মিয়ানমারে) উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের যে রাষ্ট্রদূত আছে, তার সঙ্গে কথাও বলেছেন। তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ তাদের বিজিপি বা বর্ডার গার্ড পুলিশের যারা এসেছে, তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন কোন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সে নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। তাদেরকে কি আকাশপথে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, নাকি পোর্টের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। আমরা একটা পথ বের করব।' এর আগে ভারতে ঢুকে পড়া নাগরিকদের মিয়ানমার আকাশপথে ফিরিয়ে নিয়েছিল বলে জানান হাছান মাহমুদ। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রম্ন সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে গত কয়েকদিন ধরেই। ওই যুদ্ধের জেরে সোমবার সকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৯৫ জন সশস্ত্র বিজিপি সদস্য। সোমবার দুপুরের দিকে তুমব্রম্ন সীমান্তে মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধের প্রভাব ঠেকাতে তৃতীয় কোনো দেশ বা জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, বাংলাদেশের সীমান্ত এখনো 'সুরক্ষিত' আছে। তিনি বলেন, 'তারা যেহেতু পালিয়ে এসেছে, তাদেরকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। সীমান্ত আমাদের যথেষ্ট সুরক্ষিত আছে। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে, এখনো তৃতীয়পক্ষকে জড়িত করার সেই প্রশ্ন আসেনি।' বিজিপি সদস্যদের ফেরানোর জন্য কোনো পক্ষ থেকে যোগাযোগ হচ্ছে- এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, 'তারা যোগাযোগ করেছে এবং আমরাও যোগাযোগ করেছি। দুইপাশ থেকেই যোগাযোগ হয়েছে।' তাদেরকে কবে নাগাদ ফেরত পাঠানো হতে পারে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, 'সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখনো আরও আসছে বা আসার সম্ভাবনা আছে। তো, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।' পালিয়ে আসাদের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে হাছান বলেন, 'আমাদের কাছে নিবন্ধিত ৯৫ জন, হয়তো এর মধ্যে আরও আসছে। আমিতো সকালবেলার খবর বলছি। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়েছে, এর মধ্যে আরও এসেছে কি না, আমি জানি না।' বাইডেনের চিঠিকে ইতিবাচক দেখছে সরকার এদিকে এদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সরকার। তিনি আরও বলেন, 'আমরা এই চিঠিকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই চিঠির মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে এবং ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছাবে।' পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'গতকাল (রোববার) মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনার ক্ষেত্রে আমাদের যে লক্ষ্য, সেটি পূরণে তারা আমাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন ইসু্যতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।' হাছান মাহমুদ বলেন, 'নতুন অংশীদারত্বের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার চিঠিতে লিখেছেন। সুতরাং আমরা নতুন অংশীদারত্ব চাই। আমাদের মধ্যে অংশীদারত্ব আগে থেকে আছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আমরা আগে থেকেই কাজ করছি।' সেটিকে আরও দৃঢ় করার কথা চিঠিতে উলেস্নখ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্বস্তি-ভাব কেটে গেছে কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমি তো মনে করি, অস্বস্তি থাকার আর কোনো কারণ নেই।' প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববার (৪ ফেব্রম্নয়ারি) ওই চিঠি মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রসঙ্গত, অত্যন্ত দক্ষতার (কেয়ারফুলি ড্রাফটেড) সঙ্গে লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের নতুন অধ্যায়ের কথা বলা হয়েছে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর প্রথমে উলেস্নখ রয়েছে 'আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার' বিষয়টি। এছাড়া সহযোগিতার আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এবং শেষ দিকে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের অভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। এর মাঝে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানিসহ অন্যান্য সহযোগিতা।