রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে ১৪ বছর আগে ১ হাজার শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো সেখানে ৫শ' শয্যার হাসপাতালের জনবল কাঠামো দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। অথচ বেড়েছে ওয়ার্ড, চিকিৎসক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। এতে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এনিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে প্রায়ই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।
রংপুর মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে ১৯৬৮ সালে ৬৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এর আগে ১৯৬৬ সালে এই হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রথমে ১৯৭৬ সালের ১৯ মার্চ ২৫০ শয্যার তৎকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ইব্রাহীম। ১৯৮৬ সালে এটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর ৭ বছর পর ১০০ শয্যা নতুন করে বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল কাঠামো। একই জনবল কাঠামো নিয়ে ২০১০ সালে ১৭ বছর পর হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়। অথচ প্রতিদিন রোগী থাকছে ২ হাজারেও বেশি।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা জানান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল না বাড়ার কারণে একদিকে নানা ধররেন চাপ ও কাজের সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা সবচেয়ে বেশি। এতে করে প্রায় ঘটছে চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগী স্বজনদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ জনবল কাঠামো বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে তারা জানান।
সূত্র মতে, ১ হাজার শয্যায় বৃদ্ধি ওষুধ, খাদ্য, ভারি যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক, নার্স, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা বাড়ানো হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সংখ্যা বাড়েনি। অথচ নতুন করে বাড়ানো হয়েছে ১০টি বিভাগ। আগে ছিল ৩২টি বিভাগ। বিভাগ ও ওয়ার্ড বাড়লেও আগের ৫শ' শয্যার হাসপাতালের জনবল
কাঠামো গঠনে অর্গানোগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়নি। তখন থেকে তৃতীয় শ্রেণির ২ হাজার ৮শ'টি ও চতুর্থ শেণির ১৮৩টি পদ শূন্য রয়েছে। ২৯৪ জন চিকিৎসক দেওয়া হলেও বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের ২৪টি পদ এখনো পূরণ করা হয়নি।
পদগুলোর মধ্যে রয়েছে, রেজিষ্ট্রার যথাক্রমে, রিউমাটোলজি, নিউরো মেডিসিন, গ্যাস্টোএন্টারোলজি, হেমাটোলজি, নেফ্ররোলজি, অর্থ্রোপেটিক্স সার্জারি, ট্রমা ইউরোলজি বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি। সহকারী রেজিস্ট্রারের মধ্যে রয়েছে নেফ্রোলজি, গ্যাস্টোএন্টারোলজি, এন্ডোক্রাইনোলজি, হেমাটোলজি, হেপাটোলজি, নিওনেটোলেজি, শিশু মেটোলজি, অস্ত্রোপচার, অনকোলজি এন্ড মাইক্রোলজি।
মেডিকেল অফিসার পদের মধ্যে রয়েছে, হেপাটোলজি, নেপ্রোলজি, হেমডায়লাইসিস,রেসপিরেটরি মেডিসিন ও ইউনানি।
অফিস সহকারী ৩২ জনের স্থলে রয়েছে ১০ জন। ক্যাশ, হিসাবরক্ষক, মডেল ক্লিনিক ও স্টোর শাখা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। এদিকে নার্স শাখায় অনেক পদ শূন্য রয়েছে। সেখানে নেই সেবা তত্ত্বাবধায়ক, উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক, নার্সিং সুপারভাইজারের ৫টি, সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২টিসহ মোট ৯টি পদ শূন্য রয়েছে।
নার্সিং শাখার উপ-তত্ত্বাবধায়ক মোছা. রওশন আরা বেগম জানান, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার কারণে ১ হাজার শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। তার দাবি সেবা তত্ত্বাবধায়ক, উপসেবা তত্ত্বাবধায়কসহ ১ হাজার ৫শ' জনবল হলে রোগীদের সেবা দেওয়া সহজ হবে। তিনি নার্সদের আবাসন ব্যবস্থারও দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তাদের আবাসন ব্যবস্থার সংকটের কারণে অনেকেই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের কোয়ার্টার ভাড়া নিয়ে থাকেন। কাউকে কাউকে বাহিরে বেশি বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নার্স ও ব্রাদার জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আঘাতজনিত কারণে যে সকল রোগ চিকিৎসা নিতে আসে নানা জটিলতায় তাদের সময়মতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। অনেককেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। ফলে অনেক রোগীর রক্তক্ষরণে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়। তারা ক্যাজুয়ালিটি চিকিৎসার জন্য জনবল দেওয়ার দাবি জানান।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ পূরণে আউট সোর্সিংয়ে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ৪শ' জনের চাহিদা পাঠানো হয়েছিল।