সাধারণের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয় ভাষা আন্দোলন

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বায়ান্ন'র ৫ ফেব্রম্নয়ারি ভাষার জন্য চলমান আন্দোলন সর্বস্তরের বাঙালির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মূলত আগের দিন অর্থাৎ ৪ ফেব্রম্নয়ারি পুরো ঢাকাজুড়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আলোড়ন তৈরি করে। এ দিনের পর থেকেই ঢাকাসহ গোটা পূর্ব বাংলার মানুষ সোচ্চার হয়ে ওঠে ভাষার দাবিতে। ভাষা সংগ্রামী আব্দুল মতিন তার স্মৃতিকথনে উলেস্নখ করেন, ৪ ফেব্রম্নয়ারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের সংবাদ পরদিন ৫ ফেব্রম্নয়ারি দৈনিক আজাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। ঢাকার শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ দিন আন্দোলনের প্রতি অনেক বেশি সহমর্মিতা পোষণ করে। স্কুল-কলেজে, অফিসে লোকের মুখে মুখে ছিল আগের দিনের মিছিল-সমাবেশের ঘটনা-গল্প। এ দিনের কর্মসূচি ছাত্রদের আরও সাহসী করে তোলে। ছাত্রনেতারা একুশে ফেব্রম্নয়ারির কর্মসূচি সফল করতে বিপুল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হলে হলে ছাত্রদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তুতি চলে। নতুন নতুন কর্মী ও উদ্যমী তরুণরা আন্দোলনে যুক্ত হতে শুরু করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের সাফল্যে ছাত্র-যুব সংগঠনগুলোও পরিকল্পনা-কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ দিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রম্নয়ারি নিখিল পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের জরুরি অধিবেশন বসে। ওই অধিবেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আপসহীন সংগ্রাম পরিচালনার কথা ঘোষণা করা হয়। (সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা, ১০ ফেব্রম্নয়ারি, ১৯৫২)। আরেক ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক তার স্মৃতিকথনে লেখেন, ৪ ফেব্রম্নয়ারির কর্মসূচি সাফল্যের পর একুশে ফেব্রম্নয়ারিকে সামনে রেখেই চলে সব কাজ। হরতাল, সভা, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি যথাযথভাবে পালনের জন্য বিভিন্ন ছাত্র-যুব সংগঠন তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে থাকে। যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ একাধিক সংগঠন এ ব্যাপারে সক্রিয় ছিল। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদও নিষ্ক্রিয় থাকেনি। তবে একুশের কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রাবাসগুলো ছিল বিশেষভাবে তৎপর। ফজলুল হক হল ও ঢাকা হলের ছাত্রনেতা-কর্মীদের এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের রাজনীতিমনস্ক ছাত্রদের মধ্যে বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়। জগন্নাথ কলেজের ছাত্রদের মধ্যে মৃণাল বারড়ি, আনিসুজ্জামান, আহমদ হোসেন ছিলেন অন্যতম। ৫ ফেব্রম্নয়ারি ডন পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে আন্দোলনের সমালোচনা করা হয়। 'প্রাদেশিকতা' শিরোনামে সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়, 'প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দিনের রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক বক্তব্য কায়েদে আজমেরই কথা। তার অনুপস্থিতিতে পাকিস্তানের শত্রম্নদের প্রভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। এটা জাতির পিতার প্রতি অবমাননা। প্রাদেশিকতার পক্ষে যারা কথা বলে তারা রাষ্ট্রের শত্রম্ন। তারা রাষ্ট্রের বুনিয়াদ ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে। তাদের কোনো প্রকার প্রশ্রয় দেওয়া অনুচিত। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জয়রথ এগিয়েই চলতে থাকে।