রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকানোর উদ্যোগ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকানোর উদ্যোগ

দেশের সবগুলো সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য আগামী ৯ ফেব্রম্নয়ারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষায় কেউ যাতে জালিয়াতির আশ্রয় নিতে না পারে, সে জন্য সক্রিয় কার্যক্রম শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্প্রতি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছতার সঙ্গে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আগামী ৯ ফেব্রম্নয়ারি দেশের সরকারি ১৮টি মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজসহ মোট ১৯টি ভেনু্যতে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। তবে বিগত দিনে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কিছু কুচক্রীমহল, প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ

\হব্যক্তি কোচিং সেন্টারের নামে বা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা ব্যক্তিগতভাবে মেডিকেল কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তা প্রদান করে। এই কুচক্রীমহল, প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা অভিভাবকদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে স্বচ্ছ পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অহেতুক হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ ছিল।'

এতে আরও বলা হয়েছে, 'এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত একটি সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর পরীক্ষা। এ জন্য সব কুচক্রীমহলের দিকে কড়া নজরদারি বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।'

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বা প্রতারণা ঠেকাতে ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স) নাসিয়ান ওয়াজেদ পুলিশের সবগুলো ইউনিটকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কেউ জালিয়াতির চেষ্টা করলে বা অর্থের বিনিময় ভর্তি করানোর আশ্বাস দেওয়া ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে একটি সংঘবদ্ধ চক্র মেডিকেলসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। বিভিন্ন সময় এই চক্রের একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবারও আগে থেকেই চক্রের সদস্যদের নজরদারি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি চলছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কেউ অনৈতিক কোনো কর্মকান্ডের চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় একটি চক্র সক্রিয় ছিল। এই চক্রে একাধিক কোচিং সেন্টারসহ চিকিৎসকরাও যুক্ত ছিল। গত বছর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি বিভিন্ন সময় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অন্তত ৭ জন চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস করা চক্রের সদস্যরা অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেও সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় যেসব কোচিং সেন্টার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, সেগুলোর মধ্যে থ্রি-ডক্টরস কোচিং সেন্টার অন্যতম। এ ছাড়া প্রাইমেট কোচিং সেন্টার, ফেইম কোচিং সেন্টার, মেডিকো ভর্তি কোচিং, ই-হক কোচিং সেন্টারও বিভিন্ন সময় জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরও এসব কোচিং সেন্টারের পাশাপাশি অন্যান্য মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন জানান, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কেউ যাতে জালিয়াতির আশ্রয় নিতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় নজরদারি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির সাইবার ইউনিটগুলোও এ বিষয়ে কাজ করছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এ বছর পাঁচ হাজার ৩৮০টি আসনে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে। গতবারের তুলনায় এবার সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এক হাজারের বেশি সিট বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে মোট ছয় হাজার ৩৪৮টি আসন রয়েছে। চলতি বছর এমবিবিএস কোর্সে মোট ১১ হাজার ৭২৮টি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সুযোগ পাবেন। এর বাইরে আর্মড ফোর্স মেডিকেল কলেজেও ৩৭৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য আসন বরাদ্দ রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে