তাবলিগ জামাতের বড় আসর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবারও গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে ইবাদতে মশগুল ছিলেন মুসলিস্নরা। এদিন বাদ ফজর থেকে ইজতেমা মাঠে আখলাক, ইমান ও কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান পরিবেশন করা হয়। যেখানে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আলেমরা অংশ নেন। ইজতেমায় গতকাল পর্যন্ত ৪৭টি দেশের ২ সহস্রাধিক বিদেশি মুসলিস্ন এসেছেন। আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। বরাবরের মতো এবারও সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আখেরি মোনাজাতও পরিচালনা করবেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বি এবং কাকরাইল মারকাজ মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের।
এদিকে, মোনাজাত ঘিরে গাজীপুরের কয়েকটি রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার ইব্রাহিম শনিবার সকালে ইজতেমা ময়দানে সাংবাদিকদের বলেন, 'বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে শনিবার রাত ১২টার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর আব্দুলস্নাহপুর থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস ও টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে জিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে মোনাজাতে
অংশগ্রহণের জন্য মুসলিস্নরা আসবেন, সেহেতু শনিবার রাত ১২টার পর থেকে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রাখা হবে।'
পুলিশের উপকমিশনার জানান, আখেরি মোনাজাতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিস্ন অংশ নেবেন। এ কারণে তাদের সুবিধার জন্য শনিবার রাত ১২টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর আবদুলস্নাহপুর থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, আবদুলস্নাহপুর থেকে কামারপাড়া রোড হয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়ক, আবদুলস্নাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত এবং মিরের বাজার থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
সেক্ষেত্রে ঢাকাগামী লোকজন ও যানবাহনগুলোকে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে তিনশ' ফিট রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যেসব লোকজন ময়মনসিংহ বা গাজীপুর যাবেন, তারা বাইপাইল থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে চলে যাবে।
টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতি?নি?ধি জানান, টঙ্গীতে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আরও তিন মুসলিস্নর মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তারা মারা যান। তারা হলেন- শেরপুর জেলা সদরের জুগনিবাগ গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে নওশের আলী (৬৫), ভোলা জেলার পরাগগঞ্জ থানার সামানদার গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আ. কাদের (৫৫) ও নেত্রকোনা সদরের কালিয়াঝুড়ি এলাকার হোসেন আহম্মদের ছেলে স্বাধীন (৪৫)।
গাজীপুর সিভিল সার্জনের কন্ট্রোলরুম সূত্র জানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে স্বাধীন ও আ. কাদের মৃতু্যবরণ করেন। নওশের আলী মারা যান বার্ধক্যজনিত কারণে। এর আগে ইজতেমা ময়দানে আসার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউনুছ মিয়া (৬০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের জামান মিয়া (৪০) এবং ইজতেমা ময়দানে ভোলা জেলার শাহআলম (৬০) ও জামালপুর জেলার মতিউর রহমান (৬০)। নেত্রকোনা জেলার আবদুস সাত্তার (৭০) ও এখলাস মিয়া (৬৮) মারা যান। এ নিয়ে এজতেমায় প্রথম পর্বে মোট ১২ মুসলিস্নর মৃতু্য হয়েছে।
৪৭ দেশের ২ সহস্রাধিক বিদেশি মুসলিস্ন এসেছেন
সংশ্লিষ্টরা বলেন, 'বিদেশি মুসলিস্নদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এবারই প্রথম ইজতেমায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। এখন পর্যন্ত ৪৭টি দেশের ২ হাজারেরও বেশি বিদেশি মুসলিস্ন ইজতেমায় এসেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। আরও কিছু মুসলিস্ন আসবেন।'
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনের শুরুতে বাদ ফজর মুসলিস্নদের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তার বয়ান বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা।
সকালের বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, 'পরকালের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ইমান-আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।'
৭২টি যৌতুকবিহীন বিয়ে
এদিকে, বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে শনিবার বাদ আসর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই অনুষ্ঠিত হয়। যৌতুকবিহীন বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুলস্নাহ রায়হান।
তিনি বলেন, 'কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। অভিভাবকরা দম্পতিদের নাম তালিকাভুক্ত করান। বিয়ের পর বয়ান মঞ্চ থেকেই মোনাজাতের মাধ্যমে নব দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করা হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় মোহর ফাতেমীর নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় দেড়শ' তোলা রুপা বা তার সমমূল্য অর্থ। এবার ৭২ জোড়া বিয়ে সম্পাদন হয়েছে।
দ্বিতীয় দিনেও এসেছেন মুসলিস্নরা
ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবারও দলে দলে তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা এসেছেন অংশ নিতে। আজ আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এই ঢল চলবে বলে জানান বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুলস্নাহ রায়হান।
ময়দানে থাকা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও ধুলা, ময়লা, শীত, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মনোযোগ দিয়ে আলেমদের বয়ান শুনছেন। তাদের 'আলস্নাহু আকবর' ধ্বনিতে মুখিরত হয়ে উঠছে টঙ্গীর তুরাগতীর।