রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কারাবন্দিদের নিয়ে বিএনপিতে দুশ্চিন্তা

হাসান মোলস্না
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কারাবন্দিদের নিয়ে বিএনপিতে দুশ্চিন্তা

নির্বাচন শেষ হওয়ায় ক্ষমতাসীনরা হার্ডলাইন থেকে সরে আসবে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের এমন ভাবনা অনেকের ক্ষেত্রে সঠিক হচ্ছে না। জাতীয় ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে অধিকাংশই মুক্ত হতে পারছেন না। এরই মধ্যে বিএনপি নেতারা সরকারবিরোধী আন্দোলন আবারও বেগবান করার আভাস দেওয়ায় কারাবন্দি নেতা ও স্বজনদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। অনেকেই মনে করছে সহজেই কারামুক্ত হওয়া যাবে না।

সম্প্রতি কারামুক্ত হওয়া দুই নেতা যায়যায়দিনের সঙ্গে আলাপকালে জানান, কারাগারে জীবন সবসময়ই কষ্টের। তবে এবারের বিষয় অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন। এবার অধিকাংশ নেতাকর্মীদের অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। গত ৬ মাসে কারাগারে দলের ১২ নেতার মৃতু্যর খবর অনেককে ভাবনায় ফেলেছে। এছাড়া নতুন করে আবারো আন্দোলনের তথ্য ক্ষমতাসীনদের কাছে আছে। তাই সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এজন্য দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।

৩৩০ দিন কারাগারে থাকার পর গত মঙ্গলবার রাতে মুক্ত হওয়ার পর যুবদল সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না যায়যায়দিনকে বলেন, কারাগারে আটক অনেক নেতা শারীরিকভাবে ভালো নেই। কবে তাদের মুক্তি মিলবে, কবে আবার প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগের শারীরিক জটিলতা ও অসুখের পরিমাণ বাড়ছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের

মনোবল শক্ত আছে।

বিএনপি সূত্র মতে,

গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পন্ড হয়ে যাওয়ার পর সিনিয়র নেতাসহ অনেক নেকার্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। শুরু হয় সারাদেশে সাড়াশি অভিযান। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজার ১৮৪ মামলায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৮৪ জনকে আসামি করা হয়। এ সময় ২৭ হাজার ৫১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়, একজন সাংবাদিকসহ মৃতুবরণ করেন ২৮ জন। ৯ হাজার ৭০৪ জন আহত হন।

সূত্র মতে, কারাগারে আটক সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বেশিরভাগ নেতা বয়োজ্যেষ্ঠ। অনেকের শরীরেই আগে থেকে রোগ বাসা বেঁধেছে। এর মধ্যে কারাগারের বন্দি জীবনে আরো কাঁবু হয়ে পড়ছেন ওইসব নেতারা। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উচ্চ রক্তচাপ, আইবিএস, মেরুদন্ড, দাঁতের সমস্যাসহ আরও বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। একইভাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, উপদেষ্টা আমান উলস্নাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবীব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সারোয়ার বয়সের ভারে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কিডনি রোগ ছাড়াও মেরুদন্ডে গুলির চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ আরো অনেক রোগে আক্রান্ত। প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে। এর বাইরেও ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যা রয়েছে। নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি গত বছরের ২৩ মে থেকে কারাগারে আছেন। হৃদরোগ, লিভার, শ্বাসকষ্টসহ আরো বেশ কিছু রোগে তিনি আক্রান্ত। এসব নেতার বাইরেও বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু ছাড়াও সাইফুল আলম নীরব, এসএম জাহাঙ্গীর, গোলাম মাওলা শাহীন, আজিজুর রহমান মুসাব্বিরসহ অনেকে রয়েছেন কারাগারে। তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন।

জানা গেছে, গত বছরের আগস্ট থেকে সারাদেশে কারাগারে ১২ জন বিএনপি নেতার মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে গত অক্টোবর থেকেই মৃতু্য হয়ে নয়জনের। যাদের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের অনেকের বয়স যেমন সত্তরোর্ধ্ব ছিল তেমনি অনেকের বয়স পঞ্চাশও পার হয়নি।

বিএনপি নেতাকর্মী আর পরিবারের স্বজনদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হলেও সেখানে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় এসব নেতাকর্মী অকালে মারা যাচ্ছেন।

জানা গেছে, কারাগারের প্রতিকূল অবস্থা জানার পর বাইরে থাকা সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতারা জামিন আবেদন করতে পর্যন্ত আদালতে যাচ্ছেন না। কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন সতর্কতার সঙ্গে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওযা পর্যন্ত জামিন না চাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। এরই মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করার তথ্য আশা-নিরাশার দোলাচলে ফেলেছে নেতাকর্মীদের।

আন্দোলন প্রসঙ্গে শনিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, 'জানি কষ্ট হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। জনগণ আমাদের সাথে আছে। অচিরেই আবার কর্মসূচি আসবে, অচিরেই সরকার পতন আন্দোলনে বিএনপি আবার মাঠে নামবে।'

প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পন্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে ৭ জানুযারি নির্বাচন পর্যন্ত পাঁচ দফায় ৭ দিন হরতাল করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এছাড়া ১২ দফায় ২৩ দিন সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ৮ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে দলটি। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে গণসংযোগ ও আলোচনা সভার মতো নিরীহ ও ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এরপর গত ২৬ ও ২৭ এবং ৩০ জানুয়ারি কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেছে বিএনপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে