রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভাষা আন্দোলনে পুরান ঢাকাবাসীর সরব সমর্থন

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভাষা আন্দোলনে পুরান ঢাকাবাসীর সরব সমর্থন

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবি উঠলে ঢাকাবাসীদের একটি বড় অংশ ছিল নির্বিকার। তাদের কেউ কেউ নেয় সহিংস অবস্থানও। ১৯৪৭ সালের শেষে দেশব্যাপী ভাষার প্রশ্নে বিক্ষোভ শুরু হলে পুরান ঢাকার উর্দুভাষীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী আবাস আক্রমণ করে। চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়াও। তাই ছাত্রনেতারা পুরান ঢাকার সর্দারদের সঙ্গে সার সিদ্ধান্ত নিলেন। সর্দারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিয়নের সহসভাপতি গোলাম মাওলা দায়িত্ব দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র শরফুদ্দীন আহমদ (যিনি নিজেই ছিলেন ঢাকাইয়া) মঞ্জুর হোসেন ও আলীম চৌধুরীকে (একাত্তরে শহীদ)।

সর্দারের প্রধান ছিলেন কাদের। ছাত্রপ্রতিনিধিরা তাকে বোঝাতে চাইলেন, রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হলে সারা দেশের মানুষ ভবিষ্যতে বেকার হয়ে যাবে। সর্দার বোঝেন না। মনও গলে না। উল্টো তিনি বলেন, উর্দুটাই ভালোই। আরবির লাহান দেখা যায়। মন খারাপ করে বসে থাকেন তিন ছাত্র। যথারীতি বৈঠকে আসে চা-নিমকি, সিঙাড়া, মিষ্টি। জিভে জল আসার মতো ব্যাপার। কিন্তু সামনে খাবার দেখেই শরফুদ্দীন আহমদের মাথায় এক বুদ্ধি খেলে। তিনি ওঠার ভান করে বলেন, সর্দার সাহেব, আপনি যখন কথা দিচ্ছেন না, তো আমরা চলি। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে চা-নাশতা গ্রহণ করা সম্ভব না। অতিথিরা না খেয়ে চলে যাবেন, এ তো ঘটতে দেওয়া যায় না। অগত্যা সর্দার ছাত্রদের ডেকে বসালেন এবং কথা দিলেন, এবার পুরান ঢাকার মুসলমানরা ছাত্রদের বিরোধিতা করবে না। তবে আন্দোলনে যোগ দেবে এমন কথাও তিনি দেননি। বৈঠকে কাদের সর্দার দুজন লোককে ডেকে বলে দিলেন, ভাষার প্রশ্নে বিরোধিতা না করার বিষয়টি অন্য

সর্দারদেরও যেন জানিয়ে দেওয়া হয়।

ছাত্ররা খুশি মনে ফিরে আসেন।

এভাবেই যেখানে ছিল বিরোধিতা, সেখানে পাওয়া গেল সহযোগিতা। ভাষা হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২

আন্দোলনের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়- একুশের আন্দোলনে ঢাকাইয়া সর্দারদের অধিকাংশই সক্রিয় সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। যেমন নারিন্দার মাওলা সর্দার, হোসেনি দালান এলাকার পিয়ারু সর্দার, রায় সাহেব বাজার এলাকার ইলিয়াস সর্দার থেকে শুরু করে মতি সর্দারের মতো অনেকে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় সহযোগিতা করেন। পিয়ারু সর্দার ৩ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকায় প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির কাজে ব্যবহৃত সিমেন্ট জোগাড় করে দেন। এক কথায় তিনি গুদামের চাবি মেডিকেলের ছাত্র আলী আসগরের হাতে তুলে দেন।

অভিন্ন ভাবনা থেকেই যে পুরান ঢাকার অধিবাসীদের সবাই ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল, এমন নয়। কেউ কেউ সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। মিছিলে গুলি চলার পর অনেকে আবেগ থেকেও বিক্ষোভে যোগ দেয়।

বেচারাম দেউড়ির গোলাম মুর্তজা করতেন বাম রাজনীতি। একুশে ফেব্রম্নয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার সমাবেশে তিনি হাজির হয়েছিলেন। সভাশেষে রাজপথে, রাজপথ থেকে তার ঠাঁই হয়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। গোপীবাগের তরুণ আব্দুর রহিমও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগ দেন আন্দোলনে। কলতাবাজারের ছেরাজুদ্দিন নান্না মিয়া মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন গুলিবর্ষণের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে। পুরান ঢাকার অনেক নারী ও ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে জড়ো হয়েছিল জেলখানার আশপাশে। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আলী আসগর এক রাতে এক ঢাকাবাসীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। এভাবে ঢাকাবাসী ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে