রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘণ্টা দেড়েকের জন্য দখলে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারা। রওশনের ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় দলীয় কার্যালয়ে যান। তারা অফিসে ঢোকার আগে দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং মোনাজাতে অংশ নেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, খোরশেদ আলম খোশু, শাহীন আরা সুলতানা রিমা, শেখ রুনা, জাতীয় ওলামা পার্টির মাওলানা সোহরাব হোসেন এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
কাজী মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, 'দলের সাবেক চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও সাবেক মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু দলের বিস্তর ক্ষতি করেছেন, দলের ইমেজ নষ্ট করেছেন। বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমাদের দল এখন শক্তিশালী, দল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, দল সামনে দিকে এগিয়ে যাবে। আজ থেকে আমরা এই কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলাম।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কাদের-চুন্নুর জন্য আজ দলের বেহাল দশা। তাদের নেতৃত্বের প্রতি পার্টির নেতাকর্মীদের আস্থা নেই।' ঘণ্টা দেড়েক সেখানে অবস্থান করে মামুনুর রশীদ নেতা-কর্মীদের নিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে এরশাদের স্ত্রী রওশন এবং ভাই জিএম কাদেরের পুরনো দ্বন্দ্ব গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নতুন করে মাথাচাড়া দেয়।
দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জিএম তাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।
নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে 'স্বেচ্ছাচারিতার' অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সেই পদত্যাগী এবং বহিষ্কৃতরা গত ২৮ জানুয়ারি জড়ো হন পার্টির 'প্রধান পৃষ্ঠপোষক' রওশনের গুলশানের বাসায়। সেখানে জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুকে 'অব্যাহতি' দিয়ে নিজেই দলের হাল ধরার ঘোষণা দেন এরশাদের স্ত্রী। মামুনুর রশীদকে তিনি দেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব।
সেদিনই জাতীয় পার্টিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল এবং জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
জিএম কাদেরের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রওশনের দেওয়া অব্যাহতির ঘোষণাকে তারা আমলে নিচ্ছেন না।
শুক্রবার রওশনপন্থিরা পার্টির প্রধান কার্যালয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে চুন্নুর বক্তব্য জানা যায়নি।