মাদক থেকে দূরে থাকা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট থাকার শপথ নিয়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে ২২তম 'মুক্তির উৎসবে' শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তারা শপথ নেয়।
মুক্তির উৎসবে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, শিল্পী-সাহিত্যিক ও প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য 'আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করব।'
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠ করান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম, বীরবিক্রম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব সারা যাকের। উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী এবং মফিদুল হক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে বলেন, 'ড. মুহাম্মদ শহিদুলস্নাহ বলেছিলেন, একজন মানুষের তিনটি মা থাকে। এক জন্মদাত্রী মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি।' আমাদের সকলের উচিত এই তিন মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। যারা আমাদের মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে আমাদেরকে কাছে উপহার দিয়েছে তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'তোমরা হয়তো আর মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা যা চেয়েছিল তোমরা তা করতে পারবে। তারা যে স্বপ্ন দেখেছিল তোমরা যদি তা বাস্তবায়ন করো, তাহলে তা হবে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর লন্ডন টাইমস লিখেছিল, রক্ত যদি স্বাধীনতার মূল্য হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছে বাংলাদেশ। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ঋণ কোনোদিন শোধ করা যাবে না। তোমার যদি স্বপ্নের স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ে তোলো।'
আশালতা বৈদ্য বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমার আকুতি- আজকের শপথের আলোকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তোমরাও সেখানে অবদান রাখবে।
জাফর ইমাম বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানি না, তাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তৃপ্তি আসে না। এটি আমাদের জাতীয় পর্যায়ে বিরাট ঘাটতি। সেই ঘাটতি পূরণে জাতীয় জাদুঘর বিরাট ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমরা সবাই যেন ইতিহাস না ভুলে যাই। মুক্তিযুদ্ধের মূল ইতিহাস আমাদেরকে জানতে হবে। এই যুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, যার জন্ম না হলে আমি মুক্তিযোদ্ধা বলে নিজেকে পরিচয় দিতে পারতাম না। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করার আহ্বান জানান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতি।
অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে ছায়ানট, অনিক বসুর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দন, ব্রতচারী নৃত্য পরিবেশন করে পলস্নীবাংলার ব্রতচারী সংঘ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সংগঠন স্পর্শ, ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বধ্যভূমির সন্তানদল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ইউসেপ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত র?্যাফেল ড্র-এ ১০০ জন বিজয়ীকে ল্যাপটপ, ট্যাব, মুক্তিযুদ্ধের বই, টি-শার্ট ইত্যাদি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।